About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

আনারস চাষ এবং হরমোন প্রয়োগে সারা বছর আনারস

Please don't forget to share this article

আনারস একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। বাণিজ্যিক ফল হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আধুনিক চাষ পদ্ধতি ও উন্নত জাতের আনারস চাষ করলে ফলন অনেক বেশি হয়। আনারস হেক্টরপ্রতি ১০-১২ মেট্টিক টন, হানিকুইন ২৫-৩০ টন, জায়েন্ট কিউ ৩০-৪০ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে।

আনারস পাহাড়ি অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য বেশি উপযোগী। আমাদের দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, ঢাকা, কুমিল্লা, দিনাজপুর, নরসিংদী জেলায় প্রচুর পরিমাণে আনারসের চাষ হয়। পুষ্টিমানের দিক দিয়েও আনারসের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশে হরিচরণ ভিটা, বারুইপুর ও ঘোড়াশাল জাতের আনারস সাধারনত বেশি জন্মে।

পুষ্টি মূল্য: আনারস ভিটামিন এ, বি ও সি এর একটি উত্তম উৎস।

ভেষজ গুণ :পাকা ফল বলকারক, কফপিত্ত বর্ধক, পাচক ও ঘর্মকারক। কাঁচা ফল গর্ভপাতকারী। পাকা ফলের সদ্য রসে ব্রোমিলিন নামক এক জাতীয় জারক রস থাকে বলে এটি পরিপাক ক্রিয়ার সহায়ক এবং রস পান্ডুরোগে হিতকর। কচি ফলের শাঁস ও পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে ক্রিমির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ব্যবহার: জ্যাম ও জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

জাত পরিচিতি:

হানিকুইন: হানিকুইন সবচেয়ে মিষ্টি আনারস। পাকা আনারসের শাঁস হলুদ রঙের। চোখ সুঁচালু ও উন্নত। গড় ওজন ১ কেজি।

জায়েন্টকিউ: গাছের পাতা সবুজ প্রায় কাটা বিহীন। পাকা আনারস সবুজাভ ও শাঁস হালকা হলুদ। গড় ওজন ২ কেজি। চোখ প্রশস্ত ও চেপ্টা।

ঘোড়াশাল: পাকা আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা হয়। চোখ প্রশস্ত। গড় ওজন ১.২৫ কেজি। পাতা কাটা বিশিষ্ট, চওড়া ও ঢেউ খেলানো।

উপযুক্ত জমি ও মাটি: উঁচু জমি ও পানি দাঁড়ায় না। মাটি হতে হবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ। জমি থেকে ১৫ সেমি উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তেরি করতে হবে। এক বেড থেকে অন্য বেডের মধ্যে ৫০-১০০ সেমি ফাঁক রাখতে হবে।

চারা রোপণের উত্তম সময় : অক্টোবর থেকে নভেম্বরে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে। সারি থেকে সারি দূরত্ব ৫০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ হতে হবে।

সারের পরিমাণ : প্রতি গাছে গোবর সার ২৯০ থেকে ৩১০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৩০ থেকে ৩৬ গ্রাম, টিএসপি ১০ থেকে ১৫ গ্রাম, এমপি সার ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম, জিপসাম ১০ থেকে ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি : গোবর, জিপসাম এবং টিএসপি বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া এবং পটাশ সার চার-পাঁচ মাস পর থেকে শুরু করে পাঁচ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

মুড়ি ফসল: আনারস চাষে অন্যান্য লাভের সাথে আরেকটি লাভ মুড়ি ফসল। মুড়িগাছ একাধিক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং ফল ধরে। সাধারণত: মুড়ি ফসল থেকে ৫ থেকে ৬ বছর সফলভাবে ফল সংগ্রহ করা যায়। ঘোড়াশাল জাতের বেলায় কাপাসিয়া এলাকায় ৪০ থেকে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুড়ি ফসল থেকে ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে আগাছা পরিষ্কার, শূন্যস্থান পূরণ, সার প্রয়োগ, বালাই ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

আনারসের সাথে সাথী ফসল চাষ: আনারসের সাথে অনায়াসে আদা, সয়াবিন, সরিষা, কলাই, কচু ইত্যাদি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়।

সেচ, নিকাশ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: শুকনো মৌসুমে আনারস ক্ষেতে সেচ দেওয়া দরকার। তাছাড়া বর্ষাকালে যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে।  চারা বেশি লম্বা হলে ৩০ সে.মি পরিমান রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে।

আগাছা আনারসের খুবই ক্ষতি করে। বছরে অন্তত দু’বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে; একবার আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করার পর ও দ্বিতীয় বার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। জমিতে সেচ প্রদান এবং সার প্রয়োগের পর মালচিং করে নিলে জমি আগাছা মুক্ত থাকে। আগাছা দিয়ে মালচিং করার পর একসময় পচে জৈব সার হিসেবে মাটিতে যুক্ত হয় এবং এতে করে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

হরমোন প্রয়োগে সারা বছর আনারস : আনারস পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে সারা বছর উৎপাদন করা যায়। হরমোন প্রয়োগের পদ্ধতি হচ্ছে, আনারসের শাকার রোপণের আট-নয় মাস বয়সের ৩০-৩২টি পাতা সম্বলিত গাছে হরমোন প্রয়োগ করতে হয়। গাছপ্রতি ৫০ মিলি ইথ্রেল দ্রবণ প্রয়োগ করতে হবে। ইথ্রেল দ্রবণ তৈরির পদ্ধতি হচ্ছে- এক লিটার পানিতে ৫০০ মিলি ইথ্রেল ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতি গাছে ৫০ মিলি করে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে এক লিটার দ্রবণ দিয়ে ৩০ টি গাছে প্রয়োগ করা যাবে। হরমোন প্রয়োগের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে।

ফসল সংগ্রহ : চারা রোপণের ১৫ থেকে ১৬ মাস পর ফসল সংগ্রহ কর সম্ভব। হিমাগারে কয়েকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

পাহাড়ী এলাকায় আনারস চাষ: পাহাড়ী এলাকায় সাধারণত: ট্যারেসিং বা কন্টুর পদ্ধতিতে (৬০ সেমি গভীর ও ৩০ সেমি প্রস্ত) চাষ করা ভালো। পাহাড়ী এলাকায় জমি তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । কেননা, বেশি নাড়াচাড়া করলে ভূমি ক্ষয় হয়ে যাবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত