About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

আলু সংগ্রহ, কিউরিং, গ্রেডিং এবং বীজআলুর গুদামজাত

Please don't forget to share this article

আলু সংগ্রহ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে পরিপক্বতা লাভ করে। বীজআলু ৭০-৭৫ দিন রেখে গাছ কেটে দিলে ভালো। রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। ক্ষেতে আলু পূর্ণবৃদ্ধি হওয়ার ১০-১২ দিন পরে অর্থাৎ গাছ ওপর থেকে মরতে শুরু করলে আলু সংগ্রহ করতে হবে অথবা আলু উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে আলু গাছের গোড়া কেটে ফেলে হাম পুলিং করতে হবে।

মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে আলু উত্তোলন করা ঠিক হবে না। আলু সকালের দিকে উত্তোলন করতে হবে। মাটি ভেজা অবস্থায় কোনোক্রমেই ফসল সংগ্রহ করা উচিত হবে না। ফসল সংগ্রহের সময় খুবই যত্নের সাথে তুলতে হবে যাতে কোদাল বা লাঙলের আঘাতে আলু কেটে নষ্ট না হয়ে যায়।

আলু সংগ্রহ শেষে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠ থেকে আলু বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। যদি কোনো কারণে আলু ক্ষেতে রাখতে হয়, তাহলে ছায়াযুক্ত জায়গায় বিছিয়ে পাতলা কাপড় বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। প্রখর সূর্যালোকে ফেলে রাখা উচিত হবে না। আধ ঘণ্টার বেশি বীজআলু রৌদ্রে রাখা যাবে না। কারণ এ অবস্থায় আলু পুড়ে যেতে পারে ও ব্লাক হার্ট রোগ হতে পারে।

আলু তোলা শেষ হলে তা পরিবহনের জন্য চটের বস্তা ব্যবহার করাই উত্তম। ক্ষেত হতে বীজআলু সাময়িক শেড পর্যন্ত পরিবহনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণত আলু বস্তায় ভরার সময় প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা গামলা ব্যবহার করা উত্তম। যদি বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে ঝুড়ির মাঝখানে চট বা ছালা বিছিয়ে সেলাই করে নিতে হবে। আলু বাড়িতে এনে পরিষ্কার, শুকনো ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে। কোনো মতেই শক্ত মেঝের ওপর ফেলা উচিত নয়, কারণ আলু থেঁতলিয়ে যাবে। আলু ঢালার সময় সতর্ক থাকতে হবে, বেশি জোরে উঁচু থেকে আলু ফেলা যাবে না।

কিউরিং ও গ্রেডিংঃ কিউরিং বা ছাল শক্তকরণের স্থান ছায়াযুক্ত, ঠাণ্ডা ও সহজে বাতাস চলাচল উপযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। পরিষ্কার ঠাণ্ডা জায়গায় আলু বিছিয়ে রেখে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে কিউরিং করতে হবে। আলু বেশি নাড়াচাড়া করলে ফেটে যেতে পারে বা ক্ষত হতে পারে। কাজেই বেশি নাড়াচাড়া না করে বাতাস চলাচল করে এমন ছায়াযুক্ত স্থানে ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু গাদা করে রাখতে হবে। এ অবস্থায় ৬-৭ দিনে চামড়া শক্ত হয় এবং তাতে নড়াচড়ায় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এতে করে আলুর গায়ের ক্ষত সেরে যাবে ও পোকার আক্রমণ থেকে সংগৃহীত আলু রক্ষা পাবে। প্রতিটি বীজ আলু সারি থেকে উন্মুক্ত করার পর একত্র করার সময় কাটা, ফাটা, থেঁতলানো, দাগপড়া, ক্ষত রোগাক্রান্ত, সবুজ রঙ, পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত, খুব ছোট আকৃতির এবং অস্বাভাবিক আলু বীজগুলো আলাদা করতে হবে যাকে প্রাথমিক বাছাই বলা হয়৷

প্রাথমিক বাছাই না করলে খারাপ বীজ বাছাই শেডের গাদাতে মিশ্রিত হয়ে ভালো বীজগুলো নষ্ট হতে পারে। অন্য জাতের বীজ আলু বাদ দিতে হবে। বিভিন্ন রোগাক্রান্ত বীজ আলু যেমন-নরম পচা, শুকনো পচা, বাদামি পচন, চক্র পচন ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত বীজআলু থাকলে পুরো গাদা বাতিল করতে হবে। আলুর দাদ রোগের ক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগ আলুর ত্বক মুক্ত থাকলে তা বীজ হিসেবে নেওয়া যাবে। বীজআলু সবুজ থাকলে ভিত্তি বীজের ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ গ্রহণযোগ্য হবে।

অতিরিক্ত ছত্রাকযুক্ত আলু বীজ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তবে ৪০ কেজি আলুতে যদি ১০ কেজি পরিমাণ বীজের গায়ে হালকা ছত্রাক থাকে তবে বীজ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। অনুমোদিত বীজ বেছে গ্রেডিং করতে হবে। ২৮ মিমি. থেকে ৪০ মিমি. পর্যন্ত ‘এ’ গ্রেড। ৪১ মিমি. থেকে ৫৫ মিমি. পর্যন্ত ‘বি’ গ্রেড।

বীজআলু গ্রেডিংয়ের পর নতুন রোগমুক্ত শুকনো বস্তায় রাখতে হবে। আলু সংরক্ষণের জন্য ৫০ কেজির ছোট চটের বস্তা সবচেয়ে ভালো। বস্তা বাতাস চলাচলের জন্য পাতলা হলে ভালো হয়। বস্তা বন্দীর পর আলু বীজ বিভাগের দেওয়া নমুনা অনুসারে ট্যাগ কার্ড লাগাতে হবে এবং প্রাথমিকভাবে প্রিকুলিং কক্ষে রাখতে হবে। প্রিকুলিং কক্ষে ২৪-৪৮ ঘণ্টা ১২.৫-১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে, যেন বীজ আলু ঠাণ্ডা সহনশীল হয়। প্রধান কক্ষে বীজ আলু সারি করে খাড়াভাবে রাখা দরকার যেন সহজে ঠাণ্ডা বাতাস চলাচল করতে পারে। একটি কক্ষে ৪-৫ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমিয়ে ২.২-২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আনতে হবে। তাপমাত্রা কমাতে সময় বেশি লাগলে বীজ গজিয়ে যেতে পারে।

গুদামের ধরনঃ আলু বাড়িতে সফলতার সাথে গুদামজাত করা যায়। আলু কিছুটা ঠাণ্ডা এবং বায়ু চলাচল করে এমন কোনো কক্ষে বা স্থানে রাখা যায়। সংরক্ষিত আলু ১০-১৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে মেঝেতে বিছিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া বাঁশের তৈরি মাচায়, ঘরের তাকে বা চৌকির নিচেও আলু বিছিয়ে রাখা যেতে পারে। সংরক্ষিত আলু ১০-১৫ দিন পর নিয়মিত পরিদর্শন ও বাছাই করতে হবে এবং রোগাক্রান্ত, পোকালাগা ও পচা আলু দেখা মাত্র ফেলে দিতে হবে।

আলু সুপ্তাবস্থায় গুদামজাতঃ ফসল পরিপক্ব হওয়ার সময় থেকে আলুর সুপ্তাবস্থা আরম্ভ হয়। আলুর সুপ্তাবস্থা ফসল পরিপক্ব হওয়ার পর থেকে প্রায় ২-৩ মাস পর্যন্ত থাকে। যেসব গুদামে শ্বাস-প্রশ্বাসের তাপ বের হওয়ার জন্য বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা আছে, সেসব স্থানে আলু সুপ্তাবস্থায় থাকাকালে খুব সহজে গুদামজাত করা যায়। সচরাচর ব্যবহৃত পাত্রে যেমন- ঝুড়ি এবং ডোল ব্যবহার করা যেতে পারে। গুদামজাতকরণ পাত্রের তলদেশ এমনভাবে তৈরি হতে হবে যাতে বাতাস ঢুকতে পারে এবং আলুর স্তূপের ভেতর যাতায়াত করতে পারে। ঘরের মেঝেতে রাখার ক্ষেত্রে আলুর স্তূপ মিটার গভীর বা ২  মিটারের বেশি প্রশস্ত না হয় এবং যথেষ্ট বায়ু চলাচলের সুযোগ থাকে। রাতে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এ সময় বাতাস সবচেয়ে ঠাণ্ডা থাকে এবং আলু হতে অতিরিক্ত তাপ বের হতে দেখা যায়। সাধারণত উচ্চফলনশীল জাত ২-৩ মাসের বেশি গুদামজাত করার জন্য উপযুক্ত নয়। দেশি জাতের আলুর সুপ্তাবস্থা ৪-৫ মাস পর্যন্ত থাকে। এসব জাত খামারপর্যায়ে বেশি সময় সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং কোন কোনটি প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

বালি দিয়ে ঢেকে রাখাঃ পরিষ্কার শুকনো বালু দিয়ে আলু ঢেকেও সংরক্ষণ করা যায়। এ ব্যবস্থায় টিউবার মথের আক্রমণ হতে আলু রক্ষা পায় এবং অংকুর শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গুদামে নিরাপদে রাখা যায়। ছোট আকারের বীজ আলুও মাটি দিয়ে তৈরি পাত্রে রেখে ঘরের ঠাণ্ডা স্থানে সফলভাবে গুদামজাত করা যায়।

বীজআলুর গুদামজাতঃ বীজ হিসেবে রাখা আলুর অংকুর গজানো শুরু হলেই আলাদাভাবে গুদামজাত করতে হবে। যেখানে দিনের আলো পড়ে (কিন্তু সকালে এবং দিনের শেষভাগ ছাড়া সূর্যের আলো পড়ে না) এমন স্থানে তাক বা মেঝের ওপর ২-৩টি স্তরে আলু গুদামজাত করা যায়। দিবালোক অংকুরকে ১০-১৫ মিমি এর বেশি দীর্ঘ হতে বাধা দেয়। বীজ আলু এভাবে কিছুদিন নিরাপদ রাখা ও গুদামজাত করা যায়।

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় হিমাগারেই আলু সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ ও উত্তম উপায়। হিমাগারে ৩.৩ ডিগ্রি থেকে ৪.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৮৫%-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে টিউবার অনেক দিন ভালো থাকে। আলু সরাসরি হিমাগারে না নিয়ে প্রথমে পূর্ব শীতলায়ন করিয়ে নিতে হয়। একইভাবে হিমাগার থেকে বের করার আগে উষ্ণকরণ প্রয়োজন।

হিমাগারে আলু রাখলে মাঠ থেকে সংগ্রহের পরে অন্তত এক সপ্তাহ ছায়ায় বিছিয়ে রেখে টিউবারের ক্ষত সারিয়ে নিতে হবে। বীজ আলু হিমায়িতকরণের সময় হিম কক্ষের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ২.২ ডিগ্রি থেকে ২.৮ ডিগ্রি সে. এ রাখলে বীজ ভালো থাকবে। অধিক ঠাণ্ডায় বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারাতে পারে এবং অধিক তাপমাত্রায় বীজ গজিয়ে যেতে পারে। সংরক্ষণকালে ২-৩ বার বস্তা উল্টিয়ে দিলে বীজ আলু ভালো থাকে এবং অংকুরিত হয় না। বাংলাদেশে এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে একবার এবং আগস্ট মাসের শেষভাগে আরো একবার অর্থাৎ সর্বমোট দুইবার বস্তাবন্দী আলুর স্থান পরিবর্তন করার উত্তম সময়।

অহিমায়িত অবস্থায় খাবার আলু সংরক্ষণঃ খাবার আলু সংরক্ষণ অনেকটা বীজ আলুর মতোই। তবে খাবার আলু বেশি সংখ্যক বস্তার স্তূপে এবং প্রয়োজনে বড় বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। খাবার আলু সংরক্ষণকালীন পরিচর্যা বিশেষ করে বস্তা পাল্টানোর ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা অবলম্বন করা যেতে পারে। খাবার আলু অবশ্যই হিমাগারে আলাদা কক্ষে বীজ আালু থেকে আলাদা করে সংরক্ষণ করা দরকার। গুদামজাত খাবার আলুতে কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ তা খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

আমাদের দেশে অহিমায়িত অবস্থায় সাধারণত চাষির নিজ ঘরে, বৈঠকখানায় বা যে কোনো চালা ঘরে ২-৩ মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। তবে সাময়িকভাবে এসব ঘরে সংরক্ষণের বিষয়ে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করলে সংরক্ষিত আলুর অপচয় কম হতে পারে। তাই যে ঘরে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা ভালো এবং অক্সিজেনের অভাব ঘটে না সেখানে আলু রাখা ভালো।

খাবার আলু সংরক্ষণের জন্য অহিমায়িত গুদাম নির্মাণঃ সম্প্রতি ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর’ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে খাবার আলু সংরক্ষণের জন্য অহিমায়িত গুদাম নির্মাণ করেছেন, যা বেশ কার্যকর। অল্প খরচে গুদামঘর বিশেষভাবে তৈরি করা যেতে পারে। ৫x১০ মিটার আকারের এবং ৩ মিটার উঁচু ছনের/টিনের ঘরে মাটি থেকে ৪৫-৫০ সেমি. উচ্চতায় শক্ত করে বাঁশের মাচা তৈরি করে ২-২.৫ মিটার দূরে দূরে ছিদ্রযুক্ত টিনের চোঙা বা বাঁশের তৈরি চোঙা স্থাপন করার পরে মাচার উপরে চোঙার চারিদিকে আলু সংরক্ষণ করতে হবে।

সংরক্ষণের আগে আলু বাছাই করতে হবে, যাতে অপরিপক্ব, পোকা খাওয়া ও কাটা আলু না থাকে। মাচার নিচের ফাঁকা জায়গা এবং চোঙার মধ্য দিয়ে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারবে। এতে আলু ভালো থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের কোনো অসুবিধা হয় না। স্টোর হাউসের নিচে স্যাঁতসেঁতে থাকতে পারবে না। সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্ণিত আকারের অহিমায়িত একটি গুদামঘরে ১০০-১৫০ টন আলু সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করা যায়। অহিমায়িত গুদাম সম্ভব হলে পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি করে নির্মাণ করলে দক্ষিণের বাতাস গুদামের সমস্ত অংশে প্রবাহিত হতে পারে। এতে সংরক্ষিত আলুর গুণাগুণ ভালো থাকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত