About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

মৌমাছি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। মধু সংগ্রহের পদ্ধতি

Please don't forget to share this article

তৃতীয় খণ্ড

মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাকেই বলা হয় মৌমাছি পালন। কাঠের বাক্সে সামঞ্জস্য রেখে মৌমাছি পালনই আধুনিক মৌমাছি পালন ব্যবস্থা

মৌমাছি পালনের সরঞ্জামঃ মৌমাছি পালনের জন্য স্থায়ী ও কাঁচামাল উভয় ধরণের জিনিস দরকার হবে।

উপকরণ পরিমাণ প্রাপ্তিস্থান
কাঠের বাক্স ২টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
টুল বা স্ট্যান্ড ২টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
মধু সংগ্রহের মেশিন ১টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
ধোঁয়া যন্ত্র ১টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
মুখোশ, গ্লাভস্ বা হাত মোজা ১টি ঔষধের দোকান
হাতুড়ী ১টি হার্ডওয়ারের দোকান
নেট বা জাল   হার্ডওয়ারের দোকান
বালতি   হার্ডওয়ারের দোকান
কাঁচের বোতল/কৌটা ৫/৬টি বাসন-পত্রের দোকান
জলকান্দা ৪টি মাটির জিনিসপত্রের দোকান
ছুরি বা চাকু ১টি স্টেশনারি দোকান

কাঁচামালঃ  

উপকরণ পরিমাণ প্রাপ্তিস্থান
চিনি ১ কেজি মুদির দোকান
কাপড় ১.৫ গজ কাপড়ের দোকান
ছাকনি ১টি বাসন-পত্রের দোকান

মৌমাছি পালনের প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

মৌ-বাক্সআম, জাম, কাঁঠাল বা কেরোসিন কাঠ দিয়ে মৌ-বাক্স তৈরি করতে হবে। সিজন করা কাঁঠাল কাঠ দিয়ে মৌ-বাক্স তৈরি করলে কাঠ শুকিয়ে বাঁকা হয়ে যায়না এবং ঘুন ধরে না। মৌ-বাক্সের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা নিচে দেয়া হলো :

পাটাতন

  • পাটাতন বা কাঠের উপর সম্পূর্ণ বাক্সটি বসাতে হবে।
  • এর সামনের অংশ কিছুটা বাড়ানো থাকবে যেখানে মৌমাছির জন্য চিনিগোলা খাবার রাখতে হবে।
  • পাটাতন মৌ-কলোনির তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।

 আতুর বা বাচ্চা ঘর

  • আতুর ঘরে মৌমাছিদের চাক তৈরি করার জন্য ৭টি খোপ থাকবে।
  • এক খোপ থেকে আরেক খোপের মাঝে ৮ মিলিমিটার ফাঁক রাখতে হবে।
  • খোপগুলোতে কাঠের ফ্রেম বসাতে হবে। এই ফ্রেমের চাকে রানী মৌমাছি ডিম পাড়ে ও বংশবৃদ্ধি করে। শ্রমিক মৌমাছিরা আতুর ঘরের ফ্রেমের চাকে ফুলের রেণু জমা রাখে।

 মধুঘর

  • আতুর ঘরের ঠিক উপরের অংশ মধুঘর। সেখানে ৭টি খোপ থাকবে।
  • আতুর ঘরের তুলনায় মধুঘরের উচ্চতা কিছুটা ছোট হবে।
  • মধু ঘরটি আতুর ঘরের উপরে সমান করে বসাতে হবে।
  • মধু ঘরের একটি ফ্রেমে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত মধু জমা হতে পারে। ৭টি ফ্রেমের মৌচাকে ১.৭৫ বা পৌনে ২ কেজি মধু উৎপন্ন হতে পারে।

কাঠের ফ্রেম

  • আতুর ঘরের জন্য বড় এবং মধু ঘরের জন্য ছোট কাঠের ফ্রেম প্রয়োজন হবে।
  • ভালোভাবে কাটা এবং পরিষ্কার কাঠ দিয়ে এই ফ্রেম তৈরি করতে হবে।

ডামি বোর্ড

  • আতুর ঘরের ৭টি খোপে অনেক সময় মৌমাছি না থাকলে তাপমাত্রা কমে যায়।
  • তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য ১/২টি কাঠের ফ্রেম উঠিয়ে ডামি বোর্ড ঢুকাতে হবে।

ডিভিশন বোর্ড

  • মৌ-কলোনিকে দুই ভাগ করার জন্য আতুর ঘরের মাঝখানে ডিভিশন বোর্ড ব্যবহার করতে হবে।
  • এই ঘরের একপাশে ২/৩দিন বয়সের রাণীযুক্ত চাক রাখতে হবে। অপর পাশে রাখতে হবে রাণী ছাড়া চাক।
  • এই বোর্ডের নিচের দিকটি কাঠের ফ্রেমের চেয়ে কিছুটা বড় করে তৈরি করতে হবে।
  • রাণী ছাড়া চাকে শ্রমিক মৌমাছিরা নতুন রাণী কোষ তৈরি করে যেখানে ১৩-১৪ দিন পর নতুন রাণীর জন্ম হবে।
  • মৌ-কলোনিটি নতুন মৌ-বাক্সে নিয়ে মৌচাষ বাড়ানো যাবে। ডিভিশন বোর্ড মৌ-কলোনি বাড়ানোর সময় ব্যবহার করতে হবে।

ভেতরের ঢাকনা

  • ভেতরের আক্রান্ত মৌমাছিদেরকে মৌচাকের ছাদের নিচে চাক বানাতে সাহায্য করে।
  • ঢাকনাটির উপরের দিকে একটি ছিদ্র থাকবে।
  • এটি ব্যবহার করা হয় মৌমাছিদের গরম ও ঠান্ডা থেকে নিরাপদ রাখার জন্য।

ছাদ বা উপরের ঢাকনা

  • এই ছাদ বা ঢাকনার প্রতি পাশে একটি করে ছিদ্র রাখতে হবে।
  • ছিদ্রগুলো সরু তারের তৈরি জাল দিয়ে ঢাকতে হবে।
  • রোদ-বৃষ্টি ও ঝড় থেকে এই ছাদ মৌ-বাক্সকে রক্ষা করবে।

মৌচাক

মৌচাক হলো মৌমাছির বসবাসের জায়গা। মৌমাছি এই চাকে ডিম পাড়ে, বাচ্চা লালন-পালন করে এবং মধু জমা করে। স্থানভেদে মৌমাছি পালকেরা বিভিন্ন ধরণের মৌচাক ব্যবহার করে থাকেন। বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মৌচাক তৈরি করা যায়:

  • কেরোসিন টিনের বাক্স দিয়ে
  • গাছের ডাল কেটে গর্ত করে
  • মাটির কলস দিয়ে

 মৌমাছি পালনের বিবেচ্য বিষয়

  • মৌমাছি পালনের জন্য এমন এলাকা বেছে নিতে হবে যেখানে সব ঋতুতেই কোন না কোন গাছে ফুল থাকে।
  • আশ্বিন মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত এই ৯ মাস মৌমাছি পালনের উপযু্ক্ত সময়।
  • মৌমাছি পালন এলাকায় সরিষা, ধনিয়া, তিল, কলাই, ছোলা, পাট ও অন্যান্য ফসল ছাড়াও আম, জাম, লিচু, তেঁতুল, কলা, পেঁপে, নারিকেল, বরই/কুল, পেয়ারাসহ অন্যান্য ফলের গাছ থাকতে হবে।
  • নিরাপদ জায়গায় মৌ-বাক্স রাখতে হবে, যাতে মৌমাছিরা সহজে কাউকে আক্রমণ করতে না পারে।
  • এমনভাবে মৌ-বাক্স তৈরি করতে হবে, যেন মৌচাক থেকে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মধু বের করা যায়।

মৌ-বাক্স বসানোর পদ্ধতি

  • মৌ-বাক্স বসানোর জন্য ১.৫ থেকে ২ ফুট উঁচু টুল (কাঠ বা লোহার বড় রড দিয়ে তৈরি) লাগবে।
  • প্রথমে টুলটি চারটি জলকান্দার উপর বসাতে হবে।
  • টুলের উপর পাটাতন বসাতে হবে।
  • পাটাতনের উপর ফ্রেমসহ আতুরঘর বসাতে হবে।
  • আতুর ঘরের উপর ফ্রেমসহ মধুঘর বসিয়ে দিতে হবে।
  • মধু ঘরের ঠিক উপরে ভিতরের ঢাকনাটি বসিয়ে দিতে হবে।
  • ভিতরের ঢাকনাটি বসানোর পর এর উপর উপরের ছাদ বা ঢাকনা বসিয়ে দিতে হবে।
  • উপরের ছাদ বা ঢাকনাসহ মৌ-বাক্সটি টুলের সাথে রশি বা তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধতে হবে।
  • মৌ-বাক্স বসানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আতুরঘর ও মধুঘর পাটাতনের উপর লম্বালম্বিভাবে বসানো থাকে। এর ফলে মৌমাছি পাটাতনের উপর বসে কুইন গেট দিয়ে সহজে আতুরঘর ও মধুঘরে যেতে পারবে।

 মৌমাছি ধরা ও বাক্সে রাখার নিয়ম

  • সাধারণত মৌমাছিরা ছাদের কার্নিসের নিচে, গাছের ডালে, অন্ধকার গর্তে চাক বাঁধে। এসব স্থান থেকে মৌমাছি সংগ্রহ করে মৌ-বাক্সে রাখতে হবে।
  • সন্ধ্যাবেলা শুকনা গোবর, ছেড়া চট, কাঠের গুঁড়া দিয়ে মৌচাকে ধোঁয়া দিতে হবে।
  • ধোঁয়া পেয়ে মৌমাছি চাক থেকে সরে যাওয়ার পর মৌচাক ছুরি দিয়ে কয়েক টুকরা করে কাটতে হবে।
  • মৌচাকের একটি টুকরা একটি কাঠের ফ্রেমে রাখতে হবে।
  • কাঠের ফ্রেমে চাকের কাটা অংশ ধরে রাখার জন্য সুতা দিয়ে বাঁধতে হবে।
  • চাক বাঁধা কাঠের ফ্রেমটি আতুর ঘরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • এভাবে চাকের কাটা অংশগুলো একেকটি কাঠের ফ্রেমে সুতা দিয়ে আটকিয়ে আতুর ঘরের খোপ গুলোতে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • মৌচাকের যে অংশে মধু বেশি আছে সে অংশ আতুর ঘরে ঢুকানো যাবেনা।
  • চাক থেকে মৌমাছি তাড়াবার সময় মৌমাছিরা আশেপাশে উড়ে এসে বসলে তখন মৌমাছিগুলোকে হাত বা কাঠ দিয়ে মৌ-বাক্সের ভিতর ঢুকাতে হবে। যত সম্ভব মৌমাছি এবং রাণী মৌমাছি বাক্সের ভিতর দিতে হবে।
  • এরপর গাছের ডাল থেকে কেটে নেয়া চাক নষ্ট করে ফেলতে হবে।

 মৌ কলোনির যত্ন

  • একদিন পরপর জলকান্দার পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  • মৌ-কলোনি প্রতি সপ্তাহে একবার বা দশদিন পরপর যত্ন নিতে হবে।
  • সপ্তাহে একদিন নিচের পাটাতন পরিষ্কার করতে হবে।
  • মথ পোকার আক্রমণ ঠেকানোর জন্য কালো ও পুরনো চাক সারিয়ে দিতে হবে।
  • মধু সংগ্রহের ২ দিন পর মৌচাকে রাণী মৌমাছি আছে কিনা দেখতে হবে। কারণ মধু সংগ্রহের সময় সাবধান না থাকলে রাণী মৌমাছি মারা যেতে পারে।
  • বৃষ্টি ও মেঘলা দিনে যখন মৌমাছিদের খাবারের অভাব হয় তখন চিনির সাথে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে চিনি গোলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বৃষ্টির দিনে মৌমাছিরা যাতে বাইরে যেতে না পারে সেজন্য কুইনগেট বন্ধ করে দিতে হবে।
  • রাণী মৌমাছির ডিম দেয়ার জন্য আতুরঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে মধু ছাড়া চাক ফ্রেমের সাথে বেধে দিতে হবে।
  • সকাল বেলা মৌমাছি চলাচলের রাস্তা সম্পূর্ণ খুলে রাখতে হবে, যেন মধু নিয়ে মৌমাছি সহজে ও তাড়াতাড়ি কলোনিতে আসা যাওয়া করতে পারে।

 মৌমাছির রোগ ও চিকিৎসাপূর্ণবয়স্ক মৌমাছির আমাশয় ও পক্ষাঘাত এ দু’ধরণের রোগ হয়। আমাশয় হলে মৌমাছি ঘন ঘন হলুদ রঙের পায়খানা করে দূর্বল হয়ে যায়। পক্ষাঘাত হলে মৌমাছির পা, পাখা নাড়াতে পারেনা। উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

প্রতিকার

  • আক্রান্ত কলোনি ভালো কলোনি থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত কলোনিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অন্য কলোনিতে ব্যবহার করা যাবে না।
  • নিয়মিত কলোনি পরিদর্শনের মাধ্যমে কলোনির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।
  • কলোনিতে প্রচুর খাদ্য এবং পোলেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  • আমাশয়ের ব্যবস্থার জন্য অক্সি-টেট্রা-সাইক্লিন পাউডারের সাথে চারগুণ বেশি পরিমাণ চিনি মিশিয়ে একটানা ৭ দিন মৌমাছিদের খেতে দিতে হবে।

মৌচাক পরীক্ষার পদ্ধতি

  • বাক্সের ঢাকনা খুলে ফ্রেমের উপর পাতলা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • কাপড় একটু সরিয়ে একটি ফ্রেম বের করে ফ্রেমের দুই পাশের হাতল ধরে চাকটি ভালো করে দেখতে হবে।
  • ফ্রেমের নিচের অংশ উপরে নিয়ে চাকটি ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে।
  • এরপর লম্বালম্বিভাবে নিয়ে ভালো করে দেখতে হবে।
  • চাকসহ ফ্রেম উঠিয়ে দেখতে হবে ডিম, লারভা ও পিউপা মৌচাকের নিচের অংশ জুড়ে আছে কিনা। এগুলো চাকের উপরের দিকে থাকলে কেটে দিতে হবে।
  • বিভিন্ন কোষ এবং রাণীসহ কলোনীর বৃদ্ধির গতি ভালোভাবে দেখতে হবে।
  • চাকের চারপাশ, সামনে-পেছনে ভালো করে দেখে আস্তে আস্তে বাক্সে রাখতে হবে।
  • চাক দিয়ে এরপর কাপড়টি আবার ঢেকে রাখতে হবে।

মৌচাক সংগ্রহের পদ্ধতি

  • মৌচাকের উপর মোমের সাদা স্তর পড়লে বুঝতে হবে মৌচাক মধুতে ভরে গেছে। তখন শুকনা গোবর, খড় বা নাড়া, ছেড়া জামা বা চট জ্বালিয়ে মৌচাকের মধুঘরের উপর হালকা ধোয়া দিতে হবে।
  • মধুঘর থেকে সব মৌমাছি যখন সরে গিয়ে পাটাতনের উপর বসবে তখন পুরো মৌচাকটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • একটু একটু করে কাপড় সরাতে হবে।
  • মধুঘর থেকে ফ্রেমসহ একটা একটা করে মৌচাক বাইরে বের করে আনতে হবে।
  • মৌচাক বের করার সময় চাকে মৌমাছি থাকলে ব্রাশের সাহায্যে আতুরঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • অনেক সময় মৌমাছি মধুঘরে থেকে যায়। এক্ষেত্রে কুইন গেটের সামনে মধুঘর থেকে বের করা মৌচাক রেখে দিতে হবে।
  • এর ফলে মৌমাছি ঐ চাকে গিয়ে বসবে। এরপর মৌচাকে হালকভাবে টোকা দিলে মৌমাছি কুইন গেট দিয়ে আতুরঘরে ঢুকে যাবে।

মধু সংগ্রহ করা পদ্ধতি

  • মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করতে হবে।
  • মধু সংগ্রহের জন্য ২টি ছুরি, পরিষ্কার কাপড়, গামলা বা বালতির দরকার হবে।
  • প্রথমে একটি ছুরি ফুটন্ত গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • ছুরিটি পানি থেকে তুলে পরিষ্কার কাপড়ে মুছে নিতে হবে।
  • মধুঘর থেকে ফ্রেমসহ মৌচাকটি বের করতে হবে।
  • পরিষ্কার গামলা বা বালতির উপর মধুভর্তি চাকটি রাখতে হবে।
  • ছুরি দিয়ে মৌচাকের মধু কোষের উপর থেকে মোমের সাদা স্তরটি কেটে নিতে হবে। অপর পাশের মধু কোষের উপর থেকেও একইভাবে মোমের স্তরটি কেটে নিতে হবে।
  • এরপর মধু নিষ্কাশন যন্ত্রে ফ্রেমসহ চাকটি বসিয়ে যন্ত্রটির হাতল আস্তে আস্তে ঘুরাতে হবে।
  • ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যে মৌচাকের মধু বের হয়ে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রে জমা হবে।
  • যন্ত্রটিতে বেশি মধু জমা হলে মধু বের হওয়ার কলটি খুলে দিতে হবে।
  • গামলা বা বালতিতে মধু সংগ্রহ করতে হবে।

মধু পরিষ্কার ও সংরক্ষণ করার পদ্ধতি

  • সংগ্রহ করা মধু ছাকনী দিয়ে ছেকে নিতে হবে।
  • এরপর মধু শোধনের জন্য একটি এ্যালুমিনিয়ামের বড় ডেকচি বা কড়াই নিয়ে তাতে পানি ঢালতে হবে।
  • কড়াইয়ের মধ্যে কয়েকটি ইট বা পাথর বসিয়ে তার উপর পাত্রটি বসাতে হবে।
  • পাত্রটি এমনভাবে বসাতে হবে যেন পানি ও মধুর উচ্চতা সমান থাকে।
  • এরপর মধুর পাত্রসহ ডেকচিটি চুলার উপর বসিয়ে দিয়ে একটানা ৩০-৪০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে।
  • মধুর উপর গাদ বা সাদা ফেনা পড়লে চামচ দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।
  • এরপর ডেকচিটি চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
  • মধু ঠান্ডা হলে ছেঁকে পরিষ্কার কাঁচের বৈয়ামে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। এই মধু বিশুদ্ধ এবং অনেকদিন সংরক্ষণ করা যাবে।

মৌমাছি পালনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে মৌমাছি পালনের বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া মৌমাছি পালন সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক)- এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করবে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে  প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। মৌমাছি আমাদের মধু, মোম সরবরাহ করার পাশাপাশি ফুলের পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। তাই অল্প খরচে বসত বাড়ির যে কোন জায়গায় মৌমাছি পালন করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত