About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

গ্লাডিওলাস ফুলের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন পদ্ধতি ও সম্ভাবনা

Please don't forget to share this article

গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ অনেক লাভজনক। গ্লাডিওলাস বাংলাদেশে বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজারে এ ফুলের চাহিদাও প্রচুর। এর ইংরেজি নাম Sword lily ও বৈজ্ঞানিক নাম Gladiolus sp. গ্লাডিওলাস ফুলের উৎপাদন সারাবছর বাংলাদেশে করা যায়। এই ফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, যেমন- সাদা, হলুদ, গোলাপী লাল, ফিকে লাল, বেগুনী ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, ফরিদপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করা হচ্ছে।

মাটিঃ যে কোন ধরনের উর্বর মাটিতেই গ্লাডিওলাস চাষ করা যায় তবে সুনিষ্কাশিত দোআঁশ ও বেঁলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য উত্তম।

আবহাওয়া ও জলবায়ুঃ সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আর্দ্র ও ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার। সাধাণত ১৫-২০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা এর বৃদ্ধি ও ফুল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। গ্লাডিওলাস প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা আলো পছন্দ করে। তাই রৌদ্রজ্জ্বল জায়গা এবং ঝড়ো বাতাস প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে এামন জায়গা এই ফুল চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাটির পিএইচ মান ৬-৭ এর মধ্যে থাকা ভালো। করম রোপণ এবং স্পাইক বের হওয়ার আগে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি হলে ফলন হ্রাস পায়।

জাতঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গ্লাডিওলাস ফুলের বারি গ্লাডিওলাস-১, বারি গ্লাডিওলাস-২ ও বারি গ্লাডিওলাস-৩ জাতগুলো উদ্ভাবন করেছে। এই জাতগুলো আমাদের দেশের সব জায়গায় চাষাবাদের উপযোগী।

বংশবিস্তারঃ বীজ, করম ও করমেলের মাধ্যমে গ্লাডিওলাসের বংশবিস্তার করা যায়। সাধারণভাবে চাষের জন্য করম রোপণ করা হয়। ৪-৫ সেমি ব্যাসের করম ব্যবহার করা উত্তম।

ফুল চাষের সময়ঃ গ্লাডিওলাস চাষের উপযুক্ত সময় হলো কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) মাস।

জমি তৈরিঃ জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে।

সার প্রয়োগঃ গ্লাডিওলাস চাষে হেক্টরপ্রতি ১০ টন পচা গোবর, ২০০ কেজি ইউরিয়া, ২২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৯০ কেজি এমপি দিতে হবে। শেষ চাষের সময় গোবর, টিএসপি ও এমপি মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক রোপণের ২০-২৫ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক পুষ্পদন্ড বের হওয়ার পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

করম রোপণঃ রোগমুক্ত বড় (৩০+/-০.৫গ্রাম) মাঝারি (২০+/-০.৫ গ্রাম) ওজনের ৩.৫-৪.৫ সেমি ব্যাসযুক্ত করম ৬-৯ সেমি গভীরতার রোপণ করতে হবে। রোপনের আগে করম ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম তরান্বিত হয়। বীজকে রোগ মুক্ত করতে ডাইথেন-এম ৪৫এর মধ্যে ভিজিয়ে (১০ লি. পানিতে ৩০-৩৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে) ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। সারি থেকে সারি ২০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ ১৫ সেমি দূরত্ব রেখে মাটির ৫-৬ সেমি গভীরে রোপন করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ

আগাছাঃ জমিকে অবশ্যই আগাছমুক্ত রাখতে হবে। আগাছামুক্ত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে অঙ্কুরোদগমে কোনো ক্ষতি না হয়।

সেচঃ শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে। প্রতি সেচের পর জমিতে জো আসলে নিড়ানি দিয়ে জমি আলগা করে দিতে হবে। সাধারণভাবে করম মাটিতে লাগানোর পর হালাকা সেচ দিতে হবে। যার ফলে করমগুলো মাটিতে লেগে যাবে। ইউরিয়া সারের প্রথম উপিরি প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর হালকা সেচ দিতে হবে।

মালচিং গ্লাডিওলাসের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা হচ্ছে মাটি উঠানো। গাছের ৩-৫ পাতা পর্যায়ে একবার এবং প্রয়োজনবোধে ৭ পাতা বের হওয়ার পর অর্থাৎ স্পাইক বের হওয়ার সময় গাছের গোড়ার দু’পাশ থেকে মাটি তুলে দিতে হবে। মাটি তুলে দিলে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকে এবং বাতাসে গাছ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেচ দেওয়ার পর করম মাটির উপরে উঠে এলে পাশ থেকে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

স্টেকিং বর্ষাকালে বৃষ্টিতে পড়ে যাওয়া থেকে গাছ রক্ষার জন্য স্টেকিং প্রয়োজন। সারিতে ২ মিটার দূরে দূরে বাঁশের কাঠি পুঁতে দিতে হবে। এছাড়াও বাতাসে গাছ হেলে পড়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য ছোট ছোট খুটি বা প্লাস্টিকের রশি টেনে দেওয়া প্রয়োজন। তবে গাছ ঘন করে রোপণ করলে স্টেকিং দরকার নাও হতে পারে।

রোগ ও পোকামাকড়ঃ গ্লাডিওলাসে সীট ব্লাইট রোগে পাতা ও ফুল আক্রান্ত হয় এবং ফিজিরিয়াম রট জীবানুর আক্রমণে কান্ড ও গোড়া পচে যায়। উভয় রোগের জন্য ১৫ দিন অন্তর বেভিস্টিন (.২%) বা ডাইথেন এম ৪৫ রোগ নাশক স্প্রে করতে হবে। পোকার জন্য রাইসন বা পারহেকথিয়ন স্প্রে করতে হবে।

ফুল সংগ্রহঃ করম লাগানোর পর জাতভেদে ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। সাধারণত স্পাইকের নিচ থেকে ১-২টি পাপড়ি ফুটলে ফুল সংগ্রহ করতে হয়। ফুল সংগ্রহের পরপরই বালতি ভর্তি পানিতে সোজা করে ডুবিয়ে রেখে পরে নিম্ন তাপমাত্রায় (৬-৭ ডিগ্রী) সংরক্ষণ করা উত্তম। স্পাইক কাটার সময় গাছের গোড়ায় ৪-৫টি পাতা রাখতে হবে তাহলে করম পুষ্ট হবে।

করম তোলা ও সংরক্ষণঃ সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে করম তোলা হয়। ফুল কাটার ৬-৮ সপ্তাহ পরে করম উঠানোর উপযোগী হয়। ফুল ফোঁটা শেষ হলে পাতা হলুদ হয় হয়ে গাছ মারা যায়। এ সময় গাছের গোড়া খুঁড়ে সাবধানে করমগুলি সংগ্রহ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন করম কেটে বা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। করম সংগ্রহের পর বড় ও ছোট করম বাছাই করে ছায়ায় শুকাতে হবে। সংরক্ষণের আগে করমগুলোকে ০.১% বেনলেট বা ০.২% ক্যাপটান দ্রবণে ৩০ মিনিট শোধন করে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর করমগুলো ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ভরে ঘরের শকনো ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।

ফলনঃ প্রতিহেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ টন ফুল বা স্টিক পাওয়া যায়। একইভাবে প্রায় ১০ টন উন্নত করম পাওয়া যায়।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত