About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

ফুলকপির চাষ পদ্ধতি ও জাতসমুহ। পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

Please don't forget to share this article

ফুলকপি শীতের  প্রধান জনপ্রিয় সবজি। তরকারি বা কারি ও স্যুপ তৈরি করে, বড়া ভেজে ফুলকপি খাওয়া হয়। তবে শীতের সবজি হলেও ফুলকপি এখন গ্রীষ্মকালেও উৎপাদিত হচ্ছে।

পুষ্টি মূল্য ও ব্যবহারঃ

ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম ও ফসফরাস খনিজ উপাদান আছে। এ ছাড়াএর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আছে পানি ৯০.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.০ গ্রাম, খনিজ লবণ ১.৯ গ্রাম ইত্যাদি।

জলবায়ু ও মাটিঃ

ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভালো। ফুলকপির জন্য ঠাণ্ডা ও আর্দ্র জলবায়ু ভালো। উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না এবং সারা দিন রোদ পায় এরূপ জায়গা ফুলকপি চাষের জন্য উত্তম। ফুলকপি চাষের মাটিতে যত জৈব পদার্থ থাকবে ফলন ততই ভালো হবে। মাটির অম্লমান বা পিএইচ ৬.০-৬.৫ ফুলকপি চাষের জন্য উত্তম।

ফুল কপির জাতঃ

এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী জাতও আছে। ফুলকপির বিভিন্ন জাত আছে যেমন :
১. আগাম জাত– অগ্রাহনী, আর্র্লিপাটনাই, আর্লিস্নোবল, সুপার স্নোবল, ট্রপিক্যাল স্নো-৫৫, সামার ডায়মণ্ড এফ ১, স্নো কুইন এফ ১, হিট মাস্টার  ও হাইব্রিড জাত। এসব জাতের বীজ শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বুনতে হয়।

২. মধ্যম আগাম জাত– পৌষালী, রাক্ষুসী, স্নোবল এক্স, স্নোবল ওয়াই, হোয়াইট টপ, স্নো ওয়েভ, বিগটপ, বিগশট, মোনালিসা এফ ১, চন্ড্রিমা ৬০ এফ ১ ইত্যাদি। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস হলো এসব জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

৩. নাবী জাত– মাঘী বেনারসি, ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাউন্টেন, ক্রিস্টমাস, এরফার্ট ও হাইব্রিড জাত। এসব জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো আশ্বিন-কার্তিক মাস।

এ জাতগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক বারি ফুলকপি-১ (রোপা)ও বারি ফুলকপি-২ (অগ্রদূত ) নামে মধ্যম আগাম জাতের ফুলকপির দুইটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়। বারি ফুলকপি-১ জাতের প্রতিটি ফুলকপির ওজন ৮৫০ থেকে ১০০০ গ্রাম। ফুলকপি চারদিকে পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। এ দেশের জলবাযুতে বারি ফুলকপি-১ জাতের বীজ উৎপাদন করা যায়। প্রভাতী জাত থেকে হেক্টরপ্রতি ৪০০-৫০০ কেজি বীজ উৎপাদন করা যায়। জীবন কাল কপি উৎপাদন ১০০-১১০ দিন এবং বীজ উৎপাদন প্রায় ১৮০ দিন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৫০-৬০ টন ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে চাষ করে বীজের ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।

বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত) আকারে গোলাকার, উপর-নিচ চেপ্টা। পাতার পৃষ্ঠদেশে পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু রয়েছে। প্রতিটি বাঁধাকপির ওজন ২.০-২.৫ কেজি। জাতটি বাংলাদেশের জলবায়ুতেই বীজ উৎপাদন করে। বীজ বপন থেকে কপি উৎপাদন পর্যন্ত ১০০-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৫৫-৫৬ টন এবং বীজের ফলন ৫৫০-৬৫০ কেজি পাওয়া যায়। এ জাত বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদের উপযোগী।

বীজের হারঃ

এক শতক জমিতে রোপণের জন্য ২ থেকে ২.৫ গ্রাম বীজের চারার প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে একরপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

চারা তৈরিঃ
ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমতো না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেওয়া ভালো।

চারা রোপণ রোপণ দূরত্বঃ

বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট। চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে অথবা বেঁকে না যাতে পারে। কেননা এতে মাটিতে চারার প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।

সারের পরিমাণঃ

সারের নাম সারের পরিমাণ/প্রতি শতকে

প্রতি হেক্টরে

  ইউরিয়া ১.০-১.২ কেজি ২৫০-৩০০ কেজি
  টি এস পি ০.৬-০.৮ কেজি ১৫০-২০০  কেজি
  এমওপি ০.৮-১.০ কেজি ২০০-২৫০ কেজি
  বোরাক্স ২৮-৪০ গ্রাম ৭.০-১০.০ কেজি
  গোবর ৬০-৮০ কেজি ১৫-২০ টন

সার প্রয়োগের নিয়মঃ

জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমওপি ও বোরন সার ৩ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি সার দিতে হবে চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং শেষ কিস্তির সময় সার দিতে হবে ৫০ দিন পর। তবে পুরো বোরাক্স বা বোরন সার জমি তৈরির সময় দিয়ে দিলেও অসুবিধে নেই। আর সে সময় দিতে না পারলে পরবর্তীতে ১ম ও ২য় কিস্তিতে সার দেওয়ার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্পে করে দেওয়া যায়। তবে সকালে শিশির ভেজা পাতায় যেন দানা সার না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিজনিত সমস্যাঃ

মাটিতে গৌণ পুষ্টি উপাদান বোরন এবং মলিবডেনামের ঘাটতি থাকলে ফুলকপির গাছ সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।বোরনের অভাবে পুষ্পমঞ্জরি গঠন ভালো হয় না। ফুলকপির রঙ বাদামি বর্ণের হয়, পুষ্পমঞ্জরির ভেতরটা ফাঁপা হয় এবং ফুলকপি পচে যায়। অম্ল ও বেলে ধরনের মাটতে এ রোগ বেশি দেখা যায়।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিন গ্রাম বোরাক্স (সোহাগা) প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজতলার চারা গাছে এক বার, চারা লাগানোর এক সপ্তাহ পর এক বার এবং ৬/৭ সপ্তাহ পর আরেকবার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করে দিতে হবে।

মলিবডেনামের অভাবে ফুলকপির পাতা সরু হয়ে যায় ও বেঁকে যায়। কখনও কখনও পাতা কুঁকড়ে যায়। পুষ্পমঞ্জরির চেহারা অস্বাভাবিক হয় ও পুষ্পমঞ্জরির মধ্যে ছোট ছোট পাতা দেখা যায়। এছাড়াও  কচি চারার পাতার কিনারা হলুদ বা সাদা হয়ে যায়। বয়স্ক গাছে নতুন পাতার ফলক ঠিকমতো গঠিত হয় না৷ ঘাটতি বেশি হলে গাচের বৃদ্ধি কেন্দ্র ভেঙ্গে পড়ে৷

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সোডিয়াম মলিবডেট আধা গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বোরাক্সের সঙ্গে স্প্রে করা যেতে পারে। বর্তমানে বাজারে অণুখাদ্যের মিশ্রণ পাওয়া যায়। এই মিশ্রণ ১৫ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করা যেতে পারে। যেমন, ট্রাসেল-২ অথবা এগ্রোমিন প্রতি লিটার পানিতে পাঁচ গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া বাজারে ভকসল সুপার নামের যে অণুখাদ্য পাওয়া যায়, তা প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে ফুল আসার আগে ১-২ বার এবং ফুল আসার পর ৩-৫ বার ১৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ

সার দেওয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেওয়ার আগে মাটির আস্তর ভেঙ্গে দিয়ে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

বিশেষ পরিচর্যাঃ

ফুলকপি গাছের সারি মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দেয়া যায়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। তবে ফুলকপির ফুল সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থায় চারদিক থেকে পাতা টেনে বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে পড়লে ফুলের রং তথা ফুলকপির রং হলুদাভ হয়ে যাবে।

ব্ল্যানচি (Blanching):

ফুলকপির প্রাগমঞ্জরী রোদে উন্মোচিত হলে তার বর্ণ হলুদাভ হয়ে যায়। এতে স্বাদ কমে না গেলেও আকর্ষণীয়তা অনেকাংশেই কমে যায়। ফলে ফুলকপির বাজার দরও কমে যায়। কেননা ক্রেতারা সবসময় আকর্ষণীয় ও ধবধবে সাদা ফুলকপি পছন্দ করেন। রোদ থেকে রক্ষা করার জন্য চারপাশের কয়েকটি পাতাকে গুটিয়ে এনে যখন প্রাগমঞ্জরী ঢেকে দেওয়া হয় তখন এই প্রক্রিয়াকেই ব্ল্যানচিং বলে। ফসলসংগ্রহের সপ্তাহ খানেক আগে থেকে ছায়াবৃত থাকলেই কপির সাদাবর্ণ বজায় থাকে। উদ্ভিদ প্রজননবিদরা বর্তমানে এমন কিছু স্ব-শ্বেতবর্ণধারী জাত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন যেগুলো চারদিকে পাতা দিয়ে নিজেরাই প্রাগমঞ্জরীকে ঢেকে রাখে।

পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনাঃ

ফুলকপির লেদা পোকাঃ পোকা গাছের কচি পাতা, ডগা ও পাতা খেয়ে নষ্ট করে।

প্রতিকারঃ

  • পোকার ডিম ও লেদা হাত দারা বাছাই করা।
  • ফুলকপি চাষের জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • পোকার আক্রমণ বেশি হলে অনিমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা। যেমন- সাইপারমেথ্রিন ( রিপকট/ কট/রেলোথ্রিন ) ১ মিলি/ লিটার পানি অথবা ক্যারাটে ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফুলকপির কাটুই পোকা কাটুইপোকার কীড়া চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়।

প্রতিকারঃ

  • জমিতে সন্ধ্যার পর বিষটোপ ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ (১ কেজি চালের কুঁড়া বা গমের ভূসির সাথে ২০ গ্রাম সেভিন নামক কীটনাশক পানি বা চিটাগুড়ের সাথে ব্যবহার)।
  • জমিতে চাষের সময় দানাদার কীটনাশক ব্যবহারকরতে হবে। যেমন-ডায়াজিনন ১৩ কেজি/ হেক্টর অথবা কার্বোফুরান ১০ কেজি/ হেক্টর দিতে হবে।
  • এছাড়াও ক্লোরপাইরিফস ( ডার্সবান/ লর্সবান ) ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফুলকপির জাবপোকাঃ জাবপোকা গাছের পাতা ও কচি ডগার রস শুষে খায়।

প্রতিকারঃ

  • ফুলকপি চাষের জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • জৈব বালাইনাশক ব্যবহার। যেমন- নিম পাতার রস, আতা গাছের পাতার রস, সাবানের গুড়া পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়।
  • আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক দিতে হবে। যেমন-ইমিডাক্লোপ্রিড ( টিডো /ইমিটাফ ) ০.৫ মিলি/লিটার পানি অথবা সবিক্রন ১ মিলি/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফুলকপির রোগ বালাইঃ

ফুলকপির গোড়া পচা রোগঃ

লক্ষণ

  • আক্রান্ত চারার গোড়ার চারদিকে পানিভেজা দাগ দেখা যায় ।
  • ক্রমণের দুইদিনের মধ্যে চারা গাছটি ঢলে পড়ে ও আক্রান্ত অংশে তুলারমতো সাদামাইসেলিয়াম দেখা যায় ও অনেক সময় সরিষার মত ছত্রাকের অনুবীজ পাওয়া যায়।
  • শিকড় পচে যায়, চারা নেতিয়ে পড়ে গাছ মারা যায় ।
  • স্যাতস্যাতে মাটি ও মাটির উপরিভাগ শক্ত হলে রোগের প্রকোপ বাড়ে ।
  • রোগটি মাটিবাহিত বিধায় মাটি, আক্রান্ত চারা ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে ।
  • চারা টান দিলে সহজে মাটিথেকে উঠে আসে।

প্রতিকার

  • পরিমিত সেচ ও পর্যাপ্ত জৈব সার প্রদান করা ও পানি নিস্কাশনের ভালো ব্যবস্থা রাখা।
  • সরিষার খৈল প্রতি হেক্ট্ররে ৩০০ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি লিটার পানিতে ইপ্রোডিয়ন বা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: রোভরাল ২ গ্রাম বা অটোস্টিন ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে মাটিসহ ভিজিয়ে দিতে হবে। অথবা
  • প্রতি লিটার পানিতে কপার অক্সিকোরাইড ৪গ্রাম /১ লিটার পানি + স্ট্রেপ্টোমাইসিন ১ গ্রাম/১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
  • ম্যানকোজেব + কার্বেণ্ডাজিম ( কম্প্যানিয়ন ) বা ম্যানকোজেব ( ইণ্ডোফিল এম ৪৫) ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে দিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।

ফুলকপির কার্ড বা মাথা পচা রোগঃ

লক্ষণঃ

  • ফুলকপির কার্ডে প্রথমে বাদামি রঙের গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে একাধিক দাগ মিশে বড় দাগের সৃষ্টি করে।
  • ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে কার্ডে দ্রুত পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত কার্ড বা মাথা থেকে খুব কম পুষ্পমঞ্জরি বের হয়। ফলে এটি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ

  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
  • বীজ বপনের আগে প্রোভ্যাক্স বা কার্বেনডাজিম বা নইন প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
  • ইপ্রোডিয়ন এবং কার্বেনডাজিম ছত্রাকনাশক প্রতিটি পৃথক পৃথকভাবে ০.২% হারে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে,ওষুধ প্রয়োগের ৫ দিন পর পর্যন্ত ফসল তোলা যাবে না।

অল্টারনারিয়া স্পট বা ব্লাইট বা পাতায় দাগ রোগঃ

লক্ষণঃ

  • অল্টারনারিয়া ব্রাসিসিকোলা নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হতে থাকে।
  • চারা অবস্থায় এই রোগের আক্রমণ হলে চারা গাছ খাটো হয়ে যায বা মরে যায়।
  • চারা রোপণের পর গাছ আক্রন্ত হলে পাতায় প্রথমে আলপিনের মাথার মতো বিন্দু বিন্দু বাদামি রঙের দাগ পরে।
  • পরবর্তীতে দাগগুলো বড় হতে হতে ৫ সেমি ব্যাস পর্যন্ত হলদে রং ধারণ করে পরে ধীরে ধীরে দাগগলো গোলাকার চাক চাক বাদামি রঙের দাগে পরিণত হয়।

প্রতিকারঃ

  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • বীজ বপনের আগে কার্বেনডাজিম প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে দিতে বীজ শোধন করতে হবে।
  • সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • রোগের আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

কপি জাতীয় ফসল চাষে রোগ আক্রমণের পূর্বে করনীয়ঃ

১. একই জমিতে বার বার কপি জাতীয় ফসল চাষ করা যাবে না;
২. দিনের বেশির ভাগ সময় ছায়া পড়ে এমন জমিতে কপি জাতীয় ফসল চাষ করা যাবে না;
৩. পরিমিত সেচ ও পর্যাপ্ত জৈব সার প্রদান করা ও পানি নিস্কাশনের ভাল ব্যবস্থা রাখা;
৪. সরিষার খৈল ৩০০ কেজি/ হেঃ হারে জমিতে প্রয়োগ করা;
৫. বীজতলায় হেঃ প্রতি ২.০ টন ট্রাইকো-কম্পোস্ট ব্যবহার করা;
৬. রোদ-তাপ, গরম পানি, কাঠের গুঁড়া, মুরগির বিষ্ঠা প্রভৃতি দিয়ে মাটি শোধন করতে হবে;
৭. লাল মাটি বা অম্লীয় মাটির ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি চার কেজি হারে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে (প্রতি তিন বছরে একবার);
৮. বীজ বপনের আগে বীজতলায় খড় বা ক্ষেতে শুকনো কাঠের গুড়া ৩ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে পোড়ানো;
৯. বপনের আগে প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।

ফসল তোলা ও ফলনঃ

রোপণের আড়াই থেকে তিন মাস পর ফুলকপি সংগ্রহ করতে হবে। সাদা রঙ ও আঁটো সাঁটো থাকতে থাকতেই ফুলকপি তুলে ফেলা উচিত। মাথা ঢিলা ও রঙ হলদে ভাব ধরলে দাম কমে যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২৫ টন, হেক্টরে ৩৫-৬০ টন।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত