Agriculturelearning

নিম চাষ পদ্ধতি, নিম পাতার উপকারিতা এবং নিমের ঔষধি গুণাগুণ

Please don't forget to share this article

নিম একটি অভূতপূর্ব ঔষধি গাছ। নিম বহুবর্ষজীবী মাঝারি ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ। নিমের ইংরেজি নাম Neem, বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম  Azadirachta indica। এটি Meliaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। নিমকে নিম্ব, ভেপা, তামার আরও অনেক নামে ডাকা হয়। নিমের জনপ্রিয়তা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। নিমের পাতা থেকে বাকল, শিকড় থেকে ফুল, ফল থেকে বীজ সবগুলোই আবশ্যকীয়ভাবে কাজে লাগে। নিমের গুণ অতুলনীয়।

নিম বৃক্ষ পরিচিতিঃ নিম অনেক দ্রুতবর্ধনশীল গাছ। পরিপক্ব বয়সে ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে শুকনো জায়গায় পত্রঝরা বৃক্ষের মতো আচরণ করে। গাছের গোড়ার ব্যাসার্ধ  ৬০-৮০ সেমি পর্যন্ত হয়। গাছ বা মোটা ডালের বাকলের রং গাঢ় ও অমসৃণ হলেও অপেক্ষাকৃত কচি ডালের রং খয়েরি। গাছের বাকল অপেক্ষকৃত মোটা। ডালের চারদিকে ওপর নিচে করে ৩০-৩৫ সেমি লম্বা যৌগিকপত্র জন্মে। প্রতিটি পাতায় ১০-১৭টি করে কিনারা খাঁজকাটা পত্রক থাকে। প্রতিটি পত্রক ৬-৮ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতায় জোড় এবং বিজোড় সংখ্যক পত্রক উভয়ই থাকতে পারে। সারা বছর পাতা গজায়। তবে বসন্তে পাতা ঝরাকালে বেশির ভাগ পাতা ঝরে যায়। নিম খরা সহনশীল। নিম ফল পাখির প্রিয় খাদ্য।

নিমের উৎপত্তিস্থলঃ নিম বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা গেলেও উত্তরাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। বলা হয় এর আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত আর মিয়ানমারে। এ গাছটি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান সৌদি আরবে জন্মে। বর্তমানে এ উপমহাদেশেসহ উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলীয় সবদেশেই নিমগাছের বিভিন্ন প্রজাতি ছড়িয়ে আছে। সৌদি আরবের আরাফাত ময়দানে বাংলাদেশের নিম গাছের হাজার লাখো সংখ্যা আমাদের গর্বিত করে।

নিমের প্রকারভেদঃ ২ প্রকার নিম আছে। একটি হলো মহানিম বা ঘোড়ানিম যার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Melia sempervirens এটি সাধারণ নিমের মতো বহু গুণে গুণান্বিত নয়। অপরটি হলো মিঠো নিম, এটি তেমন তেতো নয়, এর উদ্ভিদতান্তিবত নাম হচ্ছে Azadirachta Siamensis । এটি আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চল মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায় এবং সবজি হিসেবেও এর বহুল ব্যবহার প্রচলিত।

বীজ সংগ্রহ ও চারা উত্তোলন এবং বপন রোপণ : সাধারণত আামদের দেশে বর্ষার শুরুতে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তবে এর আগে বা পরেও বীজ সংগ্রহ করা যায়। নিমের বীজ খুব বেশি বড়ও না আবার ছোটও না। প্রতি কেজি বীজে মোট বীজের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০০-১৮০০টি। গাছ থেকে অথবা গাছের নিচ থেকে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করতে হয়। এপ্রিল-মে মাসে পরিপক্ব নিম গাছে অসংখ্য ছোট ছোট সুগন্ধি সাদা ফুল দেখা যায়। জুন-জুলাই মাসে হলুদ রঙের ডিম্বাকৃতি পরিপক্ব ফল পাওয়া যায়, ফল ১২-১৮ সেমি লম্বা হয়। প্রতিটি ফলেই একটি করে বীজ থাকে। ফলের ত্বক ছড়িয়ে ছায়ায় শুকিয়ে ৩ সপ্তাহের মধ্যে পাত্রের মাটিতে বপন করতে হয়। ৩০ জুন থেকে বীজ বপন শুরু করা যায়। বীজ বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা গজায়। বীজ অংকুরোদগমের হার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ। নার্সারি বেডে, পলিথিনে বা সরাসরি জমিতে বীজ লাগানো যায়। ঠাণ্ডা আর কুসুম গরম পানিতে বীজ ভিজিয়ে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ানো যায়। ১ বছরের চারা লাগানো ভালো। চারা লাগানোর আগে কাণ্ড মূল প্রয়োজনমতো ছাঁটাই করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বরের দিকে চারা লাগানো ভালো। ৪৫ সেন্টিমিটার চওড়া ও প্রশস্ত গর্তে ২৫-৩০ কেজি জৈবসার, ৫০ গ্রাম টিএসপি ৫০ গ্রাম এমওপি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে চারা রোপণ করতে হয়। চারা লাগানোর পর অবশ্যই নিয়মিত ও পরিমিত পানি দিতে হবে চারা টিকানোর জন্য। গোড়ার মাটি উঁচু করে খাঁচা দিয়ে বেড়া ঘেরা দিতে হবে মানুষের সমান লম্বা না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ যত্ন করতে হবে। আগাছা যেন না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সাধারণত নিমগাছ খোলামেলা জায়গায় বেশি দেখা যায়। রাস্তার আশপাশে, সমতল ভূমিতে ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় সব ধরনের মাটিতে নিমগাছ জন্মে। তবে বেলে, দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। নিমগাছে মার্চ থেকে মে মাসে ফুল ফোটে। নিম ফল জুন থেকে আগস্ট মাসে পাকলে তখন বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করার ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে ব্যাগে বা মাটির পাত্রে বীজ বপন করতে হয়। বপন দেরি হলে গজানোর হার কমে যায়। নিম চারার বয়স ১ বছর হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। যে জমিতে লাগানো হবে তা আগাছাবিহীন ও পরিচ্ছন্ন হতে হবে। তবে বর্ষাকালে নিমের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য গোড়া উঁচু করে দিতে হবে। আর পশু মানুষের আক্রমণে যেন চারা নষ্ট না হয় সেজন্য রোপণের পরপরই বেড়া ঘেরা দিতে হবে। নিমের স্কেল পোকা আর ছত্রাক মারাত্মক ক্ষতি করে। সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি : পাতা সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পাতার আর্দ্রতা কমে কিছুটা গাঢ় বর্ণ ধারণ করলে প্যাকেটজাত করতে হয়। পাতার প্যাকেট অবশ্যই সঠিক শনাক্তকরণ ব্যবহারবিধিসহ বাজারজাত করতে হবে। জুন আগস্টের দিকে নিম ফল পরিপক্ব হয়। বীজ পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে মাটিতে না পড়ার জন্য ঘন জাল দিয়ে গাছকে বেঁধে দিলে সবগুলো বীজই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এ অবস্থায় বীজকে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আর্দ্রতা শতকরা ২ ভাগ থাকতে হবে। বীজ শুকানোর পর বায়ুরোধী করে প্যাকেট করে সংগ্রহ করতে হবে। নিমের ছাল কেটে টুকরো টুকরো করে নিতে হবে। এরপর ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা শূন্য করে বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ করতে হবে।

রাসায়নিক উপাদান : নিমের ছাল, ফুল, ফল, বীজে ও তেলে বিভিন্ন ধরনের তিক্ত উপাদান যেমন: স্যাপোনিন, এলকালয়েড নিমবিডিন, নিম্বন, নিম্বিনিন, নিম্বডল, ট্রাইটারপেনয়েড, সালনিন, এজাডিরাকটিন, জৈব এসিড, মেলিয়ানোন, নিম্বোলাইড, কুয়ারসেটিন ও গ্লাইকোসাইড, ট্যানিন, মারগোসিন, এজমডারিন এসব থাকে। যা হরেক রকমের কাজে লাগে।

নিমের ঔষধি গুণাগুণ : নিম বসন্ত ও বায়ু শোধনকারী হিসেবে দুনিয়া সেরা। রক্ত পরিষ্কারক, জীবাণুনাশক, চর্মরোগ, ব্রন, কৃমি ও ক্ষত আরও কত ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ দেয়। শরীরে জ্বলাপোড়া, এলার্জি ও মুখের দুর্গন্ধনাশক। দাঁতের রক্তপড়া বন্ধ করে এবং দাঁতের মাঢ়ি সবল করে। তাছাড়া জন্ডিস প্রশমক। নিম দিয়ে অন্তত ৫০টি রোগ সারানো যায় বলে শতাব্দীর ইতিহাস সাক্ষী দেয়। কিছু উল্লেখযোগ্য রোগের কথা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

নিম থেকে প্রাপ্ত সামগ্রীঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষিত একুশ শতকের বৃক্ষ এবং বর্তমান বিশ্বেও সবচেয়ে গুণধর আলোচিত ভেষজ নিম থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন নিম সামগ্রী। বাজারে নিমের যেসব পণ্য পাওয়া যায়-নিম চা, নিম ক্যাপসুল, নিম ডায়বেটিকস ক্যাপসুল, নিম চুল রক্ষাকারী ও খুশকিনাশক, নিম জৈবসার, নিম জৈববালাইনাশক, নিম পিওর অয়েল, নিম হারবাল বিউটি প্যাক, নিম হারবাল ফেসওয়াশ, নিম হারবাল কেশতেল, নিম শ্যাম্পু, নিম হারবাল টুথ পাউডার, নিমটুথ পেস্ট, নিম বেবি সোপ, নিম হারবাল হানি সোপ, বিউটি সোপ, স্কিন কেয়ার সোপসহ আরও অনেক নিম সামগ্রী।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article