Agriculturelearning

টার্কি মুরগির পরিচিতি, উৎপত্তি স্থান এবং পালন পদ্ধতি

Please don't forget to share this article

প্রথম খন্ড

টার্কি পোল্ট্রির ১১টি প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। বৈজ্ঞানিক নাম Meleagris gallopavo। এটি (Turkey) মেলিয়াগ্রিডিডিই পরিবারের এক ধরনের বড় আকৃতির পাখি বিশেষ। এগুলো দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও আকারে তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। বিশ্বের সর্বত্র টার্কি গৃহপালিত পাখিরুপে লালন-পালন করা হয়। পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং পালনের জন্য উন্নত অবকাঠামো দরকার হয় না।

টার্কি প্রতিদিন মোট খাদ্যের ৩০-৪০ ভাগ নরম ঘাস খায়, তাই খাবার খরচ কম। রোগবালাই কম বলে চিকিৎসা খরচ কম। মাংস উৎপাদনের দিক থেকে খুবই ভালো। বাড়িতে প্রায় ছয়মাস পালন করলে এক একটি টার্কির স্ত্রী জাতের ওজন হয় প্রায় ৮-১০ কেজি এবং পুরষ জাতের ওজন হয় প্রায় ১৫-২০ কেজি । পাখির মাংস হিসেবে এটা মজাদার এবং কম চর্বিযুক্ত। তাই গরু, খাসি, পোল্ট্রি ও দেশীয় হাঁস-মুরগির মাংসের পরিপূরক হতে পারে টার্কি।

বাংলাদেশেও এখন ব্যাক্তি উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছে ছোট-মাঝারি অনেক খামার। কিছু কিছু খামার থেকে টার্কির মাংস বিদেশে রপ্তানীর চেষ্টা চলছে। অচিরেই এ পাখির মাংস রপ্তানী অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ধারণা করা হচ্ছে।

টার্কির উৎপত্তি স্থানঃ যখন ইউরোপীয়রা প্রথমবারের মতো টার্কিকে আমেরিকায় দেখতে পেয়েছিল, তখন তারা ভুলবশতঃ ভাবল যে পাখিটি এক ধরণের গিনিয়া মুরগি (নুমিডা মেলিয়াগ্রিস)। পরবর্তীকালে তারা তুরস্ক দেশ থেকে মধ্য ইউরোপে পাখিটিকে নিয়ে আসে। গিনিয়া মুরগি বা গিনিয়া ফাউলকে টার্কি ফাউল নামেও ডাকা হয়। তাই, তুরস্ক দেশের নামানুসারে উত্তর আমেরিকার পাখিটির নামকরণ করা হয় টার্কি। ১৫৫০ সালে ইংরেজ নাবিক উইলিয়ামাম স্ট্রিকল্যান্ড টার্কি পাখিকে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন।

যে দেশে সর্বপ্রথম টার্কি পাওয়াঃ এটি সর্বপ্রথম গৃহে পালন শুরু হয় উত্তর আমেরিকায় । কিন্তু বর্তমানে ইউরোপ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই পাখী কম- বেশি পালন করা হয় । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস বেশ জনপ্রিয়। টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে । এর মাংসে প্রোটিন বেশি , চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখীর মাংসের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। পশ্চিমা দেশসমূহে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয়।

টার্কির জাত সমূহঃ বিশ্বে অনেক প্রজাতির টার্কি রয়েছে । এদের জাত যেমন ভিন্ন নামও তেমনি ভিন্ন ভিন্ন । তবে তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ – পালকের মূল রং কালো,তামাটে নয় । মাদী পাখির বুকের পালকের রং কালো ও ডগাগুলি সাদা হয় । যার দরুন মাত্র ১২ সপ্তাহ বয়সেই লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়।

ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট – এটি ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ ও হোয়াইট হল্যান্ডের সংকর যার পালকগুলি সাদা হয় । সাদা পালকের টার্কির গরম সহ্য করার ক্ষমতা বেশী ও সেই সঙ্গে পালক ছাড়ানোর পরে এদের পরিষ্কার ও ভালো দেখায়।

বেল্টসভিল স্মল হোয়াইট – এটি রং ও আকারে ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট প্রজাতির খুবই কাছাকাছি তবে আয়তনে ছোট । ভারী প্রজাতির তুলনায় এদের ডিম দেওয়া ,উর্বরতা ও ডিম ফোটার পরিমাণ বেশী হয় এবং ডিমে তা দেওয়ার ঝোঁক কম হয়।

নন্দনম টার্কি – প্রতিটি কালো দেশী প্রজাতি ও বিদেশী বেল্টসভিল স্মল হোয়াইট প্রজাতির শংকর।

টার্কি পালনের সুবিধাঃ টার্কি পালনের সুবিধাসমুহ হলো-

দুইভাবে টার্কি পালন করা যায় যথা- ০১. মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি; ০২. নিবিড় পালন পদ্ধতি।

০১. মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতিঃ মুক্ত চারণ পদ্ধতিতে এক একর ঘেরা জমিতে ২০০-২৫০ টি পূর্ণ বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। রাতে পাখি প্রতি ৩-৪ বর্গফুট হারে জায়গা লাগে। চরে খাওয়ার সময় তাদের শিকারি জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ছায়া ও শীতল পরিবেশ জোগানর জন্য খামারে গাছ রোপণ করতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে এতে পরজীবীর সংক্রমণ কম হয়।

সুবিধাঃ

মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় খাবারঃ টার্কি খুব ভালোভাবে আবর্জনা খুঁটে খায় বলে এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক, রান্নাঘরের বর্জ্য ও উঁইপোকা খেতে পারে। এতে আছে প্রচুর প্রোটিন,যা খাবারের খরচকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুসার্ন, ডেসম্যান্থাস, স্টাইলো এসব খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখিদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হওয়া আটকাতে খাবারে ঝিনুকের খোলা মিশিয়ে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম হিসাবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ কম করার জন্য শাকসবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের ১০ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য রক্ষাঃ মুক্তচারণ ব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ (গোল কৃমি) ও বাহ্য (ফাউল মাইট) পরজীবী সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই পাখিদের ভালো বিকাশের জন্য মাসে একবার ডিওয়ার্মিং ও ডিপিং করা আবশ্যক।

০২. নিবিড় পালন পদ্ধতিঃ বাসস্থান টার্কিদের রোদ, বৃষ্টি, হাওয়া, শিকারি জীবজন্তু থেকে বাঁচায় ও আরাম জোগায়। অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চলগুলোতে খামার করলে ঘরগুলো লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। খোলা ঘরের প্রস্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৬-৩.৩ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে। বৃষ্টির ছাঁট আটকাতে ঘরের চালা এক মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সস্তা, টেকসই, নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বস্তু যেমন কংক্রিটের হওয়া বাঞ্ছনীয়। কম বয়সি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির ঘরের মধ্যে অন্তত ৫০-১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যে অন্তত ২০ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে টার্কি পালনের সাধারণ পরিচালনা ব্যবস্থা মুরগি পালনেরই মতো, তবে বড় আকারের পাখিটির জন্য যথাযথ বসবাস, ওয়াটারার ও ফিডারের জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সুবিধাঃ

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় টার্কি মুরগির খাবারঃ নিবিড় পালন ব্যবস্থায় টার্কি মুরগিকে ম্যাশ ও পেলেট (ট্যাবলেট) দুইভাবেই খাবার দিতে হবে। মুরগির তুলনায় টার্কির শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি। সেজন্য টার্কির খাবারে এগুলোর আধিক্য থাকতে হবে। খাবার মাটিতে না দিয়ে ফিডারে দিতে হবে। যেহেতু পুরুষ ও মাদির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তির (এনার্জি) পরিমাণ আলাদা। তাই ভালো ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথকভাবে পালন করতে হবে। টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানির প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে ওয়াটারারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং আপেক্ষতৃক ঠাণ্ডা সময়ে খাবার দিতে হবে। পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের খোসার গুঁড়া দিতে হবে এবং খাবারে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে তা আস্তে আস্তে করতে হবে।

সবুজ খাদ্যঃ নিবিড় পদ্ধতিতে ড্রাই ম্যাশ হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেয়া যায়। সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুসার্ন প্রথম শ্রেণীর সবুজ খাদ্য। এছাড়া খাবারের খরচ কম করার জন্য ডেসম্যান্থাস ও স্টাইলো কুচি করে টার্কিদের খাওয়ান যেতে পারে।

টার্কি মুরগীর বাসস্থান তৈরীঃ  

বাসস্থান:

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article