About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

ধানে চিটা হওয়ার মূল কারণসমূহ এবং প্রতিরোধের উপায়

Please don't forget to share this article

ধানে স্বাভাবিকভাবে শতকরা ১৫-২০ ভাগ চিটা হয়ে থাকে। চিটার পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে ধরে নিতে হবে থোড় থেকে ফুল ফোটা এবং ধান পাকার আগ পর্যন্ত ফসল কোনো না কোনো প্রতিকূলতার শিকার হয়েছে, যেমন অসহনীয় ঠাণ্ডা বা গরম, খরা বা অতিবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ছা, পোকা ও রোগবালাই।

ঠাণ্ডাঃ রাতের তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনের তাপমাত্রা ২৮-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (কাইচথোড় থেকে থোড় অবস্থা অবধি) ধান চিটা হওয়ার জন্য মোটামুটি সংকট তাপমাত্রা। তবে এই অবস্থা পাঁচ-ছয় দিন শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলেই কেবল অতিরিক্ত চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাতের তাপমাত্রা সংকট মাত্রায় নেমে এলেও যদি দিনের তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি থাকে তবে চিটা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

গরমঃ ধানের জন্য অসহনীয় তাপমাত্রা হলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি। ফুল ফোটার সময় ১-২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়। দেরিতে বোরো ধানের আবাদ করলে অতিরিক্ত চিটা হওয়ার ভয় থাকে। বিশেষ করে মে মাসের প্রথম দিকে ধানে ফুল ফোটা অবস্থায় বেশি গরমের মধ্যে পড়লে ধানে অতিরিক্ত চিটা হয়।

ঝড়ো বাতাসঃ ঝড়ো বাতাসের কারণে গাছ থেকে পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়। এতে ফুলের অঙ্গগুলো গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ো বাতাস পরাগায়ন, গর্ভধারণ ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এতে ধানের সবুজ খোসা  খয়েরি বা কালো রং ধারণ করে। ফলে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে।

খরাঃ খরার কারণে শীষের শাখা বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বিকৃত ও বন্ধ্যা ধানের জন্ম দেওয়ায় চিটা হয়ে যায়।

ঠাণ্ডাজনিত কারণের লক্ষণঃ চারা অবস্থায় শৈত্যপ্রবাহ থাকলে চারা মারা যায়। কুশি অবস্থায় বাড় বাড়তি কমে যায়, গাছ হলুদ হয়ে যায়, থোড় অবস্থায় শীষ পুরোপুরি বের হতে পারে না, শীষের অগ্রভাগের ধান মরে যায় বা সম্পূর্ণ চিটা হয়ে যায়।

প্রতিরোধের উপায়ঃ ফসল চক্রে নেমে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করা কঠিন। কিন্তু বোরো ধান অগ্রহায়ণের শুরুতে বীজ বপন করলে ধানের থোড় এবং ফুল ফোটা অসহনীয় নিম্ন বা উচ্চ তাপমাত্রায় পড়ে না, ফলে ঠাণ্ডা ও গরম এমনকি ঝড়ো বাতাসজনিত ক্ষতি থেকেও রেহাই পাওয়া সম্ভব। চিটা ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ হলো-

  • ব্রি ধান২৮ এর ক্ষেত্রে ১৫-৩০ নভেম্বরের মধ্যে এবং ব্রি ধান ২৯ এর ক্ষেত্রে ৫-২৫ নভেম্বরের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ দীর্ঘ জীবনকাল সম্পন্ন (১৫০ দিনের উপর) ধানের জাতগুলো নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং স্বল্প জীবনকালের (১৫০ দিনের নিচে) জাতগুলো ১৫ নভেম্বর থেকে বীজতলায় বপন করতে হবে।
  • বোরো মৌসুমে কেবল ব্রি ধান ২৮ চাষ না করে বিআর ১, ব্রি ধান ৩৫ ও ব্রি ধান ৩৬ এর আবাদ করতে হবে।
  • বীজতলায় চারা থাকা অবস্থায় শৈত্যপ্রবাহ চললে চারার উচ্চতা ভেদে ৫-১০ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে। তাছাড়া স্বচ্ছ এবং পাতলা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে শৈত্যপ্রবাহকালে দিনে ও রাতে ঢেকে রাখতে হবে।
  • চারা রোপণের জন্য ৩৫ থেকে ৪৫ বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। কুশি অবস্থায় শৈত্যপ্রবাহ চললে জমিতে ১০-১৫ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে। তাছাড়া থোড় ও ফুল ফোটা স্তরে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা থাকলেও ১০-১৫ সেন্টিমিটার পানি রাখলে চিটার পরিমাণ কমানো যায়।
  • অতি আক্রমণকাতর জাতের আবাদ পরিহার করা বা অবস্থার প্রেক্ষাপটে কৃষক আবাদ অব্যাহত রাখলে ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি পরিমিত ইউরিয়া সার ও পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
  • আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ব্রি ধান২৮ এর গড় জীবনকাল ১৪০ দিন। ধরা যাক, একজন কৃষক ২৫ নভেম্বর বীজতলায় বীজ বপন করল। ৪০ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপণ করেন (অর্থাৎ ০৪ জানুয়ারি)। মূল জমিতে চারা লাগানোর পর থেকে সর্বোচ্চ কুশি স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন (অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি)। এরপর ধান গাছের প্রজনন পর্যায়ের কাইচথোড় স্তর শুরু হয়। ধান গাছে কাইচথোড় থেকে ফুল ফোটা স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৩০ দিন (অর্থাৎ ১৫ মার্চ)। পরে ধান পাকা পর্যায়ের দুধ স্তর শুরু হয়ে পরিপক্বতায় পৌঁছাতে প্রায় ৩০ দিন সময় লাগে (অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল)। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, জানুয়ারি মাস সবচেষে শীতল মাস। তাছাড়া এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। হাওর অঞ্চলে আগাম বোরো ধান আবাদ করলে অর্থাৎ অক্টোবর মাসের শেষ দিকে বীজতলা এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মূল জমিতে রোপণ করলে নিশ্চিত অতিরিক্ত ঠাণ্ডাকালীন (১৫ জানুয়ারি) প্রজনন পর্যায়ের কাইচথোড় স্তর আক্রান্ত হয় ফলে চিটা হয়। ঠাণ্ডাজনিত কারণে চিটা হলে আমরা এটাকে কোল্ড ইনজুরি বলে থাকি। আবার অনেক কৃষক ভাইয়েরা যদি একটু দেরিতে বোরো আবাদ করেন অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাহলে প্রজনন পর্যায়ের কাইচথোড় স্তরটি অতি গরমকালীন (১৫ মার্চ) গরমে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে ধানে চিটা হতে পারে।
এক কথায় বলতে গেলে, ব্রি ধান২৮, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সমযে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। ব্রি ধান২৯, ২০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে চিটার পরিমাণ কম হয় এবং ফলন বেশি হয়। তাই ব্রি ধান ২৯ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ০৫-২৫ নভেম্বর এবং ব্রি ধান ২৮ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ১৫-২৫ নভেম্বর। তাই উফশী নাবি জাতগুলো ৫ নভেম্বর এবং আগাম জাতগুলো ১৫ নভেম্বর থেকে বীজ বপন শুরু করলে ফসলের থোড়-গর্ভাবস্থা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঠাণ্ডা বা গরমের কারণে ধান চিটামুক্ত হবে এবং ফলন বেশি হবে। মূলকথা হলো ধানের কাইচথোড় থেকে ফুল স্তর পর্যন্ত সময়টুকু অতিরিক্ত ঠাণ্ডা (জানুয়ারি-মধ্য ফেব্রয়ারি) এবং অসহনীয় গরম (মার্চ-মধ্য এপ্রিল) এ সময়ে ফ্রেমে যেন না পড়ে সেদিকে একটু বিশেষ  খেয়াল রাখতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। শৈত্যপ্রবাহ, অসহনীয় উত্তাপ, ঝড়, বন্যা, পোকামাকড়, রোগবালাই এর প্রাদুর্ভাব সমূলে নির্মূল করা সম্ভব নয় তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। তাই কৃষকদেরই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

উৎসঃ আধুনিক ধানের চাষ ও কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত