About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

লিচু গাছে মুকুল থেকে ফল আসা পর্যন্ত করণীয়। পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন

Please don't forget to share this article

লিচু বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে চাষ হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুর, বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর প্রভৃতি অঞ্চলে লিচু বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে চাষ হয়ে থাকে।

দিনাজপুরে বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা, চায়না-৩, চায়না-৪ জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাসিমপুরে চাষ করা হয় ‘বেদানা লিচু’ যা সুগন্ধি, সুস্বাদু ও রসালো  হওয়ায় দেশে ও বাইরে এ লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এসব লিচু বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়েও রপ্তানি করা হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

লিচু গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে ফল ধরা পর্যন্ত পরিচর্যাঃ লিচু গাছে মুকুল আসার আগ থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস সঠিক পরিচর্যা করা অত্যন্ত জরুরি।

  • গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য সঠিক নিয়মে ও পরিমাণমতো সার প্রয়োগ করা জরুরি। নিম্নে সারের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো-
সারের নাম গাছের বয়স (বছর )
১-৪ ৫-১০ ১১-২০ ২০ এর ঊর্ধ্বে
গোবর (কেজি ) ১০ ২০ ৩০ ৫০
ইউরিয়া (গ্রাম ) ৩০০ ৮০০ ১২০০  ২০০০
টিএসপি (গ্রাম ) ৪০০ ১২০০ ২০০০ ৩০০০
এমওপি (গ্রাম ) ৩০০ ৮০০ ১২০০ ১৫০০
জিপসাম (গ্রাম ) ১০০ ২০০ ২৫০ ৩০০
জিংক সালফেট(গ্রাম) ১০ ২০ ৩০ ৫০
বোরন সার ১০ ১৫ ২০

উল্লিখিত সার বছরে ৩ কিস্তিতে লিচু গাছে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম কিস্তি বর্ষার শুরুতে ( ফল আহরণের পর ), ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে ( আশ্বিন- কার্তিক মাসে ) এবং শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর প্রয়োগ করতে হবে।

  • নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। মাটির ধরণ অনুসারে খরার সময় ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
  • গাছে মুকুল আসার আগে ১ বার, গাছে যখন ফল মটরদানার সমান হবে তখন ১ বার এবং মার্বেল আকার ধারণ করলে ১ বার প্লানোফিক্স ( ১ মিলি/৪.৫ লিটার পানি)/মিরাকুলান (১ মিলি/ লিটার পানি)/ফ্লোরা ( ২ মিলি/লিটার পানিতে ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • লিচু গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে ম্যাম্বডাসাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কোনো কীটনাশক ( ফাইটার/ ফাইটার প্লাস/ রীভা ২.৫ ইসি) ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া কার্বেন্ডাজিম জাতীয় একটি ছত্রাকনাশক (আটোস্টিন/নোইন/বেনডাজিম ২ গ্রাম/লিটার পানি/এমকোজিম ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। একই সময় ফ্লোরা ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। লিচু গুটি বা মটরদানার সমান হলে একইভাবে উল্লিখিত কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং পিজিআর ( PGR ) আরেক বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
  • ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট ১০ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ সপ্তাহ পর পর গাছে স্প্রে করলে গাছে ফল ফাটা ও ফল ঝরা সমস্যা দূর হওয়াসহ এবং ফলের আকৃতিও বড় হয়।

লিচুর পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ

লিচুর পোকামাকড়ঃ

লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকার (Litchi Fruit Borer) লক্ষণ:

  • এই পোকা লিচুর বোটার কাছে ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে এবং বীজকে আক্রমণ করে।
  • পরবর্তীতে ছিদ্রের মুখে বাদামি রঙের এক ধরনের করাতের গুড়ার মতো মিহি গুড়া উৎপন্ন করে। এর ফলে লিচু নষ্ট হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়।

প্রতিকারঃ

  • বাগান নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • আক্রন্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • বোম্বাই জাতের লিচুতে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয় বিধায় আক্রমণ প্রবণ এলাকাতে চায়না-৩ জাত লাগাতে হবে।
  • নিমের তেল বা বাইকা ২ মিলি/লিটার পানিতে গুলে গাছে স্প্রে করা যেতে পারে।
  • আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন ( রেলোথ্রিন/ রিপকট/ কট/সিমবুশ/ডেসিস ) ১ মিলি/লিটার পানি বা লিবাসিড ২ মিলি/লি পানিতে ডায়াজিনন বা সুমিথিয়ন ২ গ্রাম/ লি পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লিচুর মাইটের লক্ষণঃ

  • পুর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা মাকড় একটি শাখার কচি পাতায় আক্রমণ করে পাতার রস চুষে নেয়।
  • আক্রমণের ফলে পাতায় বাদামি রঙের মখমলের মতো এক ধরনের আবরন তৈরি হয়।
  • পাতা ভিতরের দিকে কুকড়িয়ে যায় এবং পাতা পরবর্তীতে শুকিয়ে যায়।
  • আক্রান্ত ডালে ফুল, ফল ও নতুন পাতা হয় না।
  • মাকড়ের আক্রমণ সাধারণত জুন-আগষ্ট মাসে বেশি দেখা যায়।

প্রতিকারঃ

  • আক্রন্ত পাতা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • জৈব বালাইনাশক বাইকা ২ মিলি/লিটার পানিতে গুলে গাছে স্প্রে করা যাবে।
  • মধ্য ভাদ্র হতে কার্তিক মাস এবং মাঘ মাসের শেষ হতে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত গাছে ২-৩ বার মাকড়নাশক যেমন- ওমাইট ২মিলি/লি অথবা এবামেকটিন দলীয় ( ভার্টিমেক/ সানমেকটিন ) ১.২৫ মিলি/লিটার পানি বা থিওভিট/কুমুলাস ডি এফ/ রনভিট ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

লিচুর মিলিবাগের লক্ষণঃ

  • এরা পাতা ও ডালের রস চুষে খাওয়ার ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়।
  • এই পোকার আক্রমণে পাতা ও ডালে সাদা সাদা তুলার মতো দেখা যায়। অনেক সময় পিঁপড়াও দেখা যায়।

প্রতিকারঃ

  • আক্রন্ত পাতা ও ডাল ছাঁটাই করে নষ্ট করতে হবে। পরে ১৫-২০ সেমি উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিতে হবে যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে।
  • সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম ও বাচ্চার সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে।
  • জৈব বালাইনাশক বাইকা ২ মিলি/লিটার পানিতে দিতে স্প্রে করা যাবে।
  • আক্রমণ বেশি হলে ডায়মেথয়েট জাতীয় ( টাফগর/রগর/সানগর), সুমিথিয়ন ২মিলি/লিটার পানি অথবা মিপসিন/সপসিন ১.৫ মিলি/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

বাদুরঃ পোকামাকড় ছাড়াও লিচুর প্রধান শত্রু হলো বাদুর। প্রতি বছর বাদুরের আক্রমণে প্রচুর পরিমাণ ফল নষ্ট হয়ে যায়। ফল পাকা শুরু হলে এরা সাধারণত রাতে গাছের ডালে ঝুলে পাকা ফল খেতে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন রোগ, যেমন- নিপা ভাইরাসের মতো রোগও বাদুরের দ্বারা বিস্তার লাভ করছে।

প্রতিকারঃ

  • লিচু পাকার সময় ফল রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • আমাদের দেশে প্রচলিত ও সহজ উপায়সমুহ হলো- (১) ঢোল ও টিন পিটানো, (২) ফাঁটা বাঁশ ফোটানো, (৩) পটকা ফোটানো, (৪) বাগানের চার পার্শ্বে জাল পেতে, (৫) জাল দিয়ে ফল গাছ ঢেকে রেখে ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাদুর দমন করা সম্ভব।

লিচুর রোগবালাইঃ

লিচুর পাউডারী মিলডিউ রোগের লক্ষণঃ

  • এটি ছত্রাকজনিত রোগ। এর আক্রমণে পাতা, ফুল ও গাছের শাখায় সাদা পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়।
  • আক্রমণ বেশি হলে পাতা হলুদ হয়ে মারা যায়।

প্রতিকারঃ

  • সুষম সার ব্যবহার করতে হবে এবং বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • আক্রমণ বেশি হলে সালফার জাতীয় ( থিয়োভিট/রনভিট/ কুমুলাস ডি এফ ) ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লিচুর এ্যানথ্রাকনোজ রোগের লক্ষণঃ

  • এটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগটি গাছের কাণ্ড, পাতা ও ফলে আক্রমণ করে ক্ষত সৃষ্টি করে।
  • ক্ষতের রং কালো ও বাদামি বর্ণের হতে থাকে।
  • আক্রান্ত পাতা, কাণ্ড ও ফল শুকিয়ে মারা যায়।

প্রতিকারঃ

  • আক্রন্ত গাছের অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • আক্রমণ বেশি হলে প্রোপিকোনাজল দলীয় ( টিল্ট/স্কোর/প্রাউড ),টপসিন ০.৫ মিলি/লি বা ম্যানকোজেব ( আটোস্টিন/ ডাইথেন/ইণ্ডোফিল এম ৪৫/নোইন ) ২ গ্রাম/লিটার অথবা ম্যানকোজেব + কার্বেনডাজিম ( কম্প্যানিয়ন/কেমামিক্স ) ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

লিচু পচা রোগের লক্ষণঃ

  • এটি লিচুর ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ।
  • এর আক্রমণ লিচুর বোঁটা থেকে শুরু হয়ে থাকে।
  • আক্রান্ত স্থানে প্রথমে বাদামি অথবা কালো দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে ফলের খোসায় আক্রমণ করে এবং ফল দ্রুত পচে যায়।

প্রতিকারঃ

  • বৃষ্টির দিনে লিচু না পাড়াই ভালো। গাছ থাকে ফল পাড়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে কোন আঘাত না পায়।
  • গাছে ফল থাকা অবস্থায় আক্রমণ দেখা দিলে আটোস্টিন/ ডাইথেন/ইণ্ডোফিল এম ৪৫/ রিডোমেল গোল্ড ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত