About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

রসুনের উৎপাদন পদ্ধতি। জাত পরিচিতি ও সার ব্যবস্থাপনা

Please don't forget to share this article

রসুন ( Garlic ) হলো কন্দ জাতীয় মসলা ফসল। রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম Allium sativum । রসুন শুধু মসলা হিসেবে নয় হেকিমি শাস্ত্রে ঔষধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। রসুনে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে।

রসুনের উপকারিতাঃ রসুন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে থাকে। কাঁচা রসুন সেবনে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। সর্দি কাশিতেও রসুন বেশ উপকারী। রক্তে কোলেস্টেরল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও রসুনকে ন্যাচারাল পেইন কিলারও বলা হয়। কেননা শিশু বা বড়দের দাঁতে ব্যথা হলে এক কোষ রসুন চিবালে দাঁতের ব্যথা অনেকটা উপশম হয়। নিয়মিত রসুন খেলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

বাংলাদেশের দিনাজপুর, রংপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বরাইগ্রাম, পাবনা জেলার চাটমহর, শরিয়তপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলায় রসুন বেশি উৎপাদিত হয়।

মাটি জলবায়ুঃ উর্বর দোআঁশ মাটি,পলি দোআঁশ মাটি অর্থাৎ যেখানে পানি জমে থাকে না মাটি সহজেই ঝুরঝুরা হয় এমন মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী। শক্ত এঁটেল মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী নয়। কেননা এঁটেল মাটিতে রসুনের কন্দ সুগঠিত হয় না। রসুন চাষের জমি থেকে পানি অপসারণ হওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে কন্দ বড় হয় না এবং রসুনের রং নষ্ট হয়ে যায়। রসুন সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মে।

জাত পরিচিতিঃ

  • বারি রসুন-১: বারি রসুন ১ এর গড় উচ্চতা ৬০-৬২ সেমি এবং পাতার সংখ্যা (প্রতি গাছে) ৭-৮ টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২০-২২টি। এই জাতে রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব কম। এর জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। ফলন ৬-৭ টন/ হেক্টর।
  • বারি রসুন-২: গড় উচ্চতা ৫৬-৫৮ সেমি। প্রতি গাছে পাতার সংখ্যা ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২৩-২৪ টি এবং কোয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ইঞ্চি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও সংরক্ষণ ক্ষমতা ভালো। এর জীবনকাল ১৪৫-১৫৫ দিন এবং ফলন হেক্টর প্রতি ৭-৯ টন।
  • বারি রসুন-৩: এ জাতের রসুন গাছের গড় উচ্চতা ৭১-৭২ সেমি। পাতার সংখ্যা (প্রতি গাছে) ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২৩-২৪ টি। ভাইরাস রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল হলেও মাঝে মাঝে পার্পল ব্লচ ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনকাল ১৩৫-১৪০ দিন। ফলন (হেক্টর প্রতি ) ১০.৫-১১.৩১ টন।
  • বারি রসুন-৪: গাছের গড় উচ্চতা ৬৭-৬৮ সেমি এবং পাতার সংখ্যা প্রতি গাছে ৯-১০ টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ১৭-১৮ টি। ভাইরাস রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল হলেও মাঝে মাঝে পার্পল ব্লচ ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনকাল ১৩০-১৪০ দিন। ফলন (হেক্টর প্রতি) ৮.০-৮.৭৮ টন।

বারি রসুন ১ থেকে বারি রসুন-৪ পর্যন্ত জাতসমুহ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউড কতৃক উদ্ভাবিত হয়েছে।

  • বাউ রসুন-১: রসুনের এই জাতটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিছু রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও এটি উচ্চ ফলনশীল এবং সংরক্ষণ গুন সম্পন্ন।
  • বাউ রসুন-২ এটি উচ্চ ফলনশীল ও ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী জাত। রসুনের এ জাতের সংরক্ষণ গুন অনেক ভালো এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়ে থাকে। একর প্রতি ফলন ৫০০০-৬০০০ কেজি হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ হতে বাউ রসুন-১ ও বাউ রসুন-২ নামের রসুনের জাত ২ টি উদ্ভাবিত হয়েছে।

  • ইটালি (দেশি জাত): রসুনের এই জাতের গাছগুলো শক্ত, চওড়া, পাতাগুলো উপরের দিকে থাকে এবং ফলন বেশি হয়।
  • আউশী (দেশি জাত): রসুনের এই জাতের পাতা অপেক্ষাকৃত ছোট ও চিকন। এর কন্দ আকারে ছোট এবং ঢলে পড়ে। এই জাতের ফলন কম হয়ে থাকে। এছাড়াও আকারে ছোট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও মূল্য কম পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশি জাতের মধ্যে আমনী জাতের রসুনও রয়েছে।

রসুন রোপণের সময় রসুন সাধারণত মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে রোপণ করা উত্তম।

রসুনের বীজ বপনের হারঃ  হেক্টর প্রতি ৩০০-৪০০ কেজি কোয়া বা বীজ রসুন লাগে। রসুনের কোয়ার আকার বড় হলে  ফলনও বেশি হয়।

রসুনের বীজ বপনঃ রসুনের কোয়াগুলো হাতের দু´ আঙ্গুল দিয়ে ধরে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেমি.রেখে প্রতি সারিতে ১০ সেমি.দূরে দূরে ৩-৪ সেমি.মাটির গভীরে লাগাতে হবে।

রসুনের সার প্রয়োগঃ রসুনের জমিতে হেক্টর/বিঘা প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

সারের নাম সারের পরিনাণ (হেক্টর প্রতি) সারের পরিনাণ (বিঘা প্রতি)
গোবর ৮  টন ১ টন
ইউরিয়া ২০০ কেজি ২৫-২৬ কেজি
টিএসপি ১২৫ কেজি ১৫-১৬ কেজি
এমওপি ১০০ কেজি ১৩-১৪ কেজি
জিপসাম ১০০ কেজি ১৩-১৪ কেজি
জিংক সালফেট ২০ কেজি ২-৩ কেজি
বোরাক্স(বরিক এসিড) ১০ কেজি ১-১.৫ কেজি

সারের মাত্রা মাটির উর্বরতা বা প্রকৃতি ভেদে কম বেশি হতে পারে। এক কিস্তি ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে চারা গজানোর যথাক্রমে ২৫ ও ৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও ছাই প্রয়োগ করা যাবে। কেননা ছাই দিলে মাটি আলগা থাকে এবং ফলন বেশি হয়।

রসুন চাষে আন্ত:পরিচর্যাঃ রসুনের চারা বৃদ্ধি পর্যায়ে জমিতে আগাছা থাকলে জমি আগাছামুক্ত করতে হবে। রসুন লাগানোর ১৫ দিন পর আগাছা বেশি হলে অর্থাৎ আগাছাগুলো নাড়ার উপর দিয়ে উঠা শুরু করলে রনষ্টার ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কন্দ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২-৩ বার জমিতে নিড়ানি দিতে হবে। জমিতে ৪-৫ সেমি পুরু করে কচুরিপানা বা ধানের খড় দ্বারা মালচ প্রয়োগ করলে রসুনের ফলন ভালো হয়। এক্ষেত্রে বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মালচ ছাড়া করলে জমির প্রকারভেদে ১০-১৫ দিন পর সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ রসুন লাগানোর ২ মাস পর থাকে কন্দ গঠন করতে শুরু করে। ৩-৩.৫ মাস পরে কন্দ পুষ্ট হতে আরম্ভ করে। এভাবে ৪-৫ মাস পরে রসুন উত্তোলন করা যাবে। রসুন গাছের পাতার আগ্রভাগ শুকিয়ে হলুদ বা বাদামি রং হয়ে গেলে রসুন তোলা যাবে। হাত দিয়ে টেনে গাছসহ রসুন তোলা হয়ে থাকে। এভাবে রসুনের কন্দগুলি ৪-৫ দিন ছায়াতে শুকানোর পর মরা পাতা কেটে সংরক্ষণ করা হয়।

ফলনঃ রসুনের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৮-১০ টন।

ফসল উত্তোলনের পর করণীয়ঃ

  • রসুনের কন্দগুলো ৪-৫ দিন ছায়াতে শুকিয়ে নিলে রসুনের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
  • রোদে শুকালে রসুন নরম হয়ে যেতে পারে।
  • ফুতি পোকার র্লাভা থেকে রসুনকে রক্ষার জন্য সংরক্ষণের সময় সেভিন পাউডার ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • রসুন খুব ভালোভাবে পরিপক্ক করে নিয়ে জমি থেকে তুলতে হবে। কেননা অপরিপক্ক রসুন তুললে তা থেকে বীজ করা যাবে না।

বীজ হিসাবে রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ রসুন সংগ্রহের পর ৫-৭ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে ভালোভাবে শুকাতে হয়। একে রসুনের কিউরিং বলে। পরে পরিমাণ মতো (৪-৫ কেজি) রসুনের শুকনো গাছ দিয়ে বেনি তৈরি করে বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে কয়েকটা বাঁশ দিয়ে তার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এক ঝোপা থেকে অন্য ঝোপা ফাঁকা ফাঁকা করে রাখতে হবে যাতে করে বাতাস চলাচল করতে পারে। এছাড়া রসুন উত্তোলনের পর পাতা ও শিকড় কেটে ব্যাগে,বাঁশের র‌্যাকে,  মাচায় এবং চটের বস্তাতেও রসুন সংরক্ষণ করা যেতে পারে। বীজের জন্য এভাবে সংরক্ষণ করার আগে মোটা, সুস্থ, সবল, জীবাণু ও রোগমুক্ত রসুন বাছাই করা উত্তম।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত