Agriculturelearning

মাছ চাষ সফলভাবে করার ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতকরণের ধাপসমূহ

Please don't forget to share this article

মাছ চাষ সফলভাবে করার ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতিতে করণীয়: মাছ প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু যথাযথ কারিগরি জ্ঞানের অভাবে মাছের কাঙ্ক্ষিত ফলন হচ্ছে না। মাছের স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য সুষ্ঠু জলজ পরিবেশ প্রয়োজন। জলজ পরিবেশের অন্যতম উপাদান পানি । তাই সফলভাবে মাছ চাষের জন্য পানির গুনাগুন সংরক্ষণ ও মাছের আবাস স্থল জলাশয়/পুকুর প্রস্তুতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতকরণ সর্ম্পকে সংক্ষেপে নিচে আলোচনা করা হলো।

মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতকরণঃ মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতির উদ্দেশ্য হলো পুকুরের জলীয় পরিবেশ পোনার বাসযোগ্য করে তোলা। মাছের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদির নিশ্চিত করাই হলো পুকুর প্রস্তুতি। পুকুরে পোনা মজুদের আগেই পুকুর প্রস্তুত করতে হয়।

মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুত যথাযথ হলে-

  1. পানির উর্বরতা স্বাভাবিক থাকে।
  2. পুকুরের/জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  3. পুকুরে/জলাশয়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন স্বাভাবিক হয়।
  4. মাছের বৃদ্ধি ও প্রজণন আশানুরুপ হবে।
  5. মাছে রোগবালাই হবে না বা কম হবে।
  6. মাছের ফলন বেশি হবে।

মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতির ধাপগুলো হচ্ছে-

পুকুর শুকানো বা সংস্কারঃ মাছ চাষে বিশেষ করে চারা পোনা উৎপাদনের পুকুর শুকানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তাতে বিষাক্ত গ্যাস, ক্ষতিকর রোগজীবাণু ও পোকামাকড়  হতে পারে। এজন্য পুকুর শুকিয়ে অতিরিক্ত কাদা উঠিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরের পাড় ভাঙ্গা, নালা কাটা বা পাড়ে ইঁদুরের গর্ত বা পাড় নিচু থাকলে পাড় মেরামত করতে হবে এবং জলজ আগাছা পরিস্কার করতে হবে।  পুকুরের পানি অন্যত্র সরিয়ে পুকুর শুকাতে হয়। পুকুরের তলা কমপক্ষে ৭ দিন রোদে শুকাতে হয়।

পুকুর শুকানো হলে-

আগাছা দমন ও পাড় পরিস্কারঃ পুকুরের আগাছা ও পাড়ের ঝোপঝাড় সব সময় পরিস্কার রাখা দরকার। পুকুরের আগাছা মাছের চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি করে। তাই পুকুর প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে জলজ আগাছা যেমন- কচুরিপানা, টোপাপানা, ক্ষুদেপানা ও শেওলা দূর করতে হবে। পোনা মাছ আহরণের সময় শেওলায় আটকে প্রচুর পোনা মারা যায়। পুকুরের পানিতে কপার সালফেট প্রয়োগ করে এদের দমন করা যায়। প্রতি শতাংশে ৮-১০ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরের আগাছা কায়িক পরিশ্রম ও যান্ত্রিক উপায়ে বা আগাছা নাশক প্রয়োগ করেও দমন করা যায়। পুকুরের পাড়ে অবস্থিত ঝোপঝাড় থাকলে তা কেটে ফেলতে হবে এবং বড় গাছের ডালপালা পুকুরের ভিতরে ছায়ার সৃষ্টি করলে তা ছেঁটে দিতে হবে। পুকুর পরিস্কার থাকলে-

রাক্ষুসে ও অন্যান্য মাছ অপসারণঃ যে মাছ অন্য মাছ খায় তাকে রাক্ষুসে মাছ বলে। যেমন- শোল, বোয়াল, চিতল, ফলি, কাকিলা, বাইল্যা, টাকি ইত্যাদি রাক্ষুসে মাছসমূহ চাষকৃত মাছের পোনা এবং খাবার খেয়ে ক্ষতি করে। এতে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়, ফলে কাংখিত ফলন পাওয়া যায় না। এছাড়াও মলা, ঢেলা, চেলা, চাপিলা, পুটি, চান্দা, ছোট ইচা, বইচা, খলিশা ইত্যাদি আমাছা বা বাজে মাছ চাষকৃত মাছের খাবার নষ্ট করে। পুকুর শুকিয়ে কিংবা বিষ প্রয়োগ করেও এসব রাক্ষুসে ও বাজে মাছ দূর করা যায়। ছোট পুকুরে ঘন ফাসযুক্ত জাল বার বার টেনে রাক্ষুসে ও অন্যান্য অবাঞ্চিত মাছ দূর করা যায়। পুকুরের রাক্ষুসে ও অন্যান্য মাছ দূরীকরণে বিভিন্ন বিষ প্রয়োগের মাত্রা ও ব্যবহার বিধি নিচে দেওয়া হলো।

চুন প্রয়োগঃ মাছ চাষের জন্য চুন প্রয়োগ অপরিহার্য। চুন মাটি ও পানির অম্লত্ব কমায়, সারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং পানির ঘোলাত্ব দূর করে। এছাড়াও চুন পানি শোধন করে এবং ক্ষতিকর রোগ জীবাণু ও পোকামাকড় ধ্বংস করে। পুকুরে শতক প্রতি ২-৩ কেজি চুন প্রয়োগ করা দরকার। অম্লত্ব অনুসারে চুনের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। শুকানো পুকুরের তলায় চাষ দেওয়ার ২-৩ দিন পর অথবা পানি ভরা পুকুরে বিষ প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর চুন প্রয়োগ করতে হয়। শুকনো পুকুরেও চুন গুড়া করে পাড়সহ এবং পানি ভরা পুকুরে চুন পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে ছিটাতে হবে। চুন গুলানো ও ছিটানোর সময় নাখ ও মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে নিয়ে বাতাসের অনুকূলে ছিটাতে হবে। বৃষ্টির দিন, মেঘলা আকাশ, খুব সকাল বা বিকালে চুন দেওয়া উচিত নয়।

সার প্রয়োগঃ মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে পুকুরের পানির র্উবরতা বৃদ্ধি ও পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন ও সবুজ শেওলা তৈরির জন্য সার প্রয়োগ করতে হয়। সারের পরিমাণ পানির উর্বরতার উপর নির্ভর করে। পুকুরে ২ ধরনের সার প্রয়োগ করতে হয়, যথা- জৈব সার ও রাসায়নিক সার। পুকুরে চুন প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। পুকুর পুস্তুতকালীন সারের মাত্রা নিচে দেওয়া হলো।

জলজ কীট পতঙ্গ দূরীকরণঃ পুকুরে সার প্রয়োগের পর সাধারণত হাউস পোকা, ব্যাঙাচি ও অন্যান্য প্রাণি জন্ম নেয়। এরা মাছের রেণু খেয়ে ফেলে এবং খাদ্যের জন্য মাছের রেণুর সাথে প্রতিযোগিতা করে। ফলে রেণুর মড়ক হয়। এজন্য রেণু ছাড়ার আগে ও পড়ে এদের নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যক। পুকুরে রেণু ছাড়ার ১২-১৫ ঘন্টা পূর্বে প্রতি শতকে ৩০ সেমি গভীরতার পানিতে ২-৩ মিলি সুমিথিয়ন প্রয়োগ করতে  হবে।

উল্লিখিত উপায়ে পুকুর প্রস্তুত করে প্রাকৃতিক থাদ্য ও পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা এবং পুকুরে হররা বা জাল টেনে মাছের পোনা ছাড়তে হয়।

লেখকঃ ইন্সট্রাকটর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারাল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি পুবাইল, গাজীপুর।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article