Agriculturelearning

ড্রাম সিডারের সাহায্যে আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের বীজ বপন ও পরিচর্যা

Please don't forget to share this article

ড্রাম সিডারঃ

ড্রাম সিডার প্লাস্টিকের তৈরি ছয়টি ড্রাম বিশিষ্ট একটি আধুনিক বপন যন্ত্র। প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামগুলো ২.৩ মিটার প্রশস্ত লোহার দন্ডে পরপর সাজানো থাকে। লোহার দন্ডের দুপ্রান্তে প্লাস্টিকের তৈরি দুটি চাকা এবং যন্ত্রটি টানার জন্য একটি হাতল যুক্ত থকে। প্রতিটি ড্রামের দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৫৫ সেন্টিমিটার এবং এর দু’প্রান্তে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুসারি ছিদ্র আছে। প্রয়োজনে রাবারের তৈরি সংযুক্ত বেল্টের সাহায্যে এক সারি ছিদ্র বন্ধ রাখা যায়। ব্রি ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ড্রাম সিডার প্রবর্তন করে।

ড্রাম সিডার ব্যবহারের সুবিধা:

ড্রাম সিডার ব্যবহারের পদ্ধতিঃ

জমি তৈরি ও বীজ বোপনের সময়ঃ

ধান রোপণের জন্য জমি যেভাবে কাদা করতে হয় সেভাবেই জমি উত্তমরূপে চাষ ও মই দিয়ে কাদাময় করে নিতে হবে। জমি সমতল করতে হবে, বীজ বপনের সময় যেন কোথাও পানি দাঁড়িয়ে না থাকে। ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে এবং বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে পরে ২-৪ দিন (মৌসুমের তাপমাত্রা কম-বেশির উপর নির্ভরশীল) জাগ দিয়ে ভালোভাবে অঙ্কুরিত করে নিতে হবে। বোরো মৌসুমে নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে বীজ বপন করতে হবে। আমন মৌসুমে পানি নিস্কাশনের সুযোগ আছে এমন মাঝারি উঁচু জমিতে জুনের শেষার্ধ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বীজ বোনা যায়। তবে বীজ বপনের অন্তত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এমন সময় বেছে নিতে হবে। কারণ বপনের পরপর ভারী বৃষ্টি হলে বীজের সারি ও বীজ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

ড্রাম সিডারের সাহায্যে  বীজ বপনঃ

ড্রামের দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্কুরিত বীজ দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। ড্রামে ভর্তি করার পূর্বে অঙ্কুরিত বীজ ছায়াযুক্ত স্থানে প্রায় ২ ঘণ্টা শুকিয়ে নিতে হবে। এতে ড্রামের ছিদ্র দিয়ে বীজগুলো সমহারে পড়বে। ছয়টি ড্রামে বীজ ভরে ড্রামসিডার যন্ত্রটি দিয়ে একসঙ্গে ১২ লাইনে বীজ বপন করা যায়। অঙ্কুর খুব ছোট হলে অতিরিক্ত বীজ পড়ে যাবে, আবার অঙ্কুর বেশী লম্বা হলে ড্রামের ছিদ্র দিয়ে পড়বে না। সাধারণত অঙ্কুরের দৈর্ঘ্য ৪-৫ মিলিমিটার, অর্থাৎ একটি ধানের সমান লম্বা হলেই ভালো হয়। বোনার সময় হাতলের সাথে ২-৩ ফুট লম্বা চিকন এক খন্ড কলা গাছ হালকা মই হিসেবে বেঁধে নিলে জমিতে পায়ের দাগ বা গর্ত মুছে যাবে এবং কিছুটা বীজের অপচয়ও রোধ হবে। অঙ্কুরিত বীজ ড্রামে ভরার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ড্রামের এক তৃতীয়াংশ অবশ্যই খালি থাকে। ড্রামের গায়ে আঁকা ত্রিভূজাকৃতি চিহ্ন যেন সবসময় সামনের দিকে থাকে। সাধারণত একক ঘন সারিতে বীজ বপন করা উত্তম এবং এতে বিঘা প্রতি ৩.৫-৪.০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।

পানি ও সার ব্যবহারঃ

বপনের প্রথম ৪-৫ দিন জমিতে পানির প্রয়োজন নেই। মাটি ভিজা থাকলেই চলবে। পরে গাছের বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে প্রথমে ছিপছিপে পানি এবং গাছ কিছুটা বড় হয়ে গেলে রোপা পদ্ধতির অনুরূপ পানির ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা জমিতে কম সময় থাকে বলে কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম কিস্তি জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে, ২য় কিস্তি ধানের গোছায় ৪-৫ টি কুশি অবস্থায় ও ৩য় কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ পূর্বে দিতে হবে। ইউরিয়া উপরি-প্রয়োগের সময় ক্ষেতে ২-৩ সেন্টিমিটার পানি থাকতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে সাথে হাতে বা উইডার দিয়ে আগাছা পরিস্কার করতে হবে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের পরেও ধান গাছ যদি হলদে থাকে এবং বাড়বাড়তি কম হয় তাহলে গন্ধকের অভাব হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এরপর হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি বা বিঘা প্রতি ৮ কেজি জিপসাম সার উপরি-প্রয়োগ করতে হবে। যদি ধান গাছ মাঝে মধ্যে খাটো হয়ে বসে যায় এবং পুরাতন পাতায় মরচে পড়া বাদামি থেকে কমলা রঙ ধারণ করে এবং ধানের কুশি কম থাকে তখন ধরে নিতে হবে দস্তার অভাব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এরপর হেক্টর প্রতি ১০ কেজি বা বিঘা প্রতি ১ কেজি ৩৫০ গ্রাম দস্তা সার উপরি-প্রয়োগ করতে হবে।

আগাছা দমনঃ

রোপণ পদ্ধতির চেয়ে সরাসরি ধান বোনা পদ্ধতিতে আগাছার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। ড্রাম সিডারে সারিতে বপন হওয়ায় নিড়ানি বা উইডার দিয়ে আগাছা দমন সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে ব্রি-উইডার বেশি উপযোগী। তবে উইডার প্রয়োগের পরে হাত দিয়ে সারির ভেতরের আগাছা পরিষ্কার করা দরকার। আগাছা দমনের জন্য আগাছানাশকও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বোরো মৌসুমে বীজ বপনের ৭-১০ দিন এবং আমন ও আউশ মৌসুমে ৪-৬ দিনের মধ্যে জমিতে ২০-২৫ মিলিলিটার রনস্টার অথবা ১০-১২ মিলিলিটার রিফিট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে সমানভাবে স্প্রে করতে হবে। জমিতে ছিপছিপে দাঁড়ানো পানি থাকা অবস্থায় আগাছানাশক প্রয়োগ করতে হবে এবং পরের ৩-৫ দিন অবশ্যই ছিপছিপে পানি রাখতে হবে।

ড্রাম সিডার বাবহারে সাবধানতাঃ

 

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article