শীতকালীন সবজি ফসলের কি কি আন্তঃপরিচর্যা করতে হয়
ফসলের আন্তঃপরিচর্যা বলতে কী বোঝায়?
বীজ বা চারা রোপণের পর থেকে ফসল সংগ্রহের পূর্বপর্যন্ত ফসলের যেসব পরিচর্যা বা যত্ন নিতে হয় তাকে ফসলের আন্তঃপরিচর্যা বলে। সেচ দেওয়া, সার দেওয়া, আগাছা দমন, বালাই দমন, চারা পাতলাকরণ, চারা ঘনকরণ, মালচিং, রোগিং, সঠিক নিয়মে ঠিকভাবে আগাম সবজি ফসল কোমল ও সতেজ অবস্থায় সংগ্রহ করে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা, সবই আন্তঃপরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত।
শীতকালে কি কি সবজি চাষ করা যায় এবং কোন সময়ে চাষ করা হয়?
শীতকালে সাধারণত বেগুন, টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, ব্রোকলি, ওলকপি, শিম, মূলা, করলা, ওলকপি, শালগম, স্কোয়াশ, শসা, গোল আলু ও অন্যান্য সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে কমপক্ষে দুইশ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস শীতকালীন সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে চাইলে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে রোপণ করা যায়। কৃষক ভাইরা চাইলে শীত মৌসুম শুরুর মাস খানেক আগে আগাম জাতের সবজি চাষ করতে পারবেন যা থেকে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বেশি মূল্যে বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন।
শীতে সবজি ফসলের কি কি আন্তঃপরিচর্যা করা প্রায়োজন যদি একটু বলতেন?
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ শীতকালে কুয়াশা কাটিয়ে যখন রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ তৈরি হবে, তখন পানি সেচ দেওয়া উত্তম। শাকসবজির গাছ পানির অভাব একেবারেই সহ্য করতে পারে না। লাউ, শিম, বরবটি, করলাজাতীয় গাছের জন্য বেশি পানির প্রয়োজন হয়। তাই ঘন ঘন পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। গাছ পানিশূন্যতায় থাকলে প্রাথমিকভাবে পাতা নিচের দিকে কুঁচকে যায়, গাছ নেতিয়ে যেতে থাকে। এসময় হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি না দিয়ে অল্প অল্প করে পানি দিতে হবে। হঠাৎ অতিরিক্ত পানিতে গাছের ক্ষতি হয়। গাছে ফল থাকলে ফল ফেটে যেতে পারে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ সবজি ফসলে খৈল সারসহ আরও কিছু জৈবসার ঘরে বানিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তারপরও যদি উদ্ভিদের কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে তবে সারের অভাবজনিত লক্ষণ দেখে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা উত্তম।
পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনার জন্য সবজি ফসলে হলুদ আঠালো কাগজ, ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা, ৮-১০ দিন পরপর ঘরে বানানো জৈব কীটনাশক আক্রান্ত গাছে স্প্রে করা যেতে পারে। লাউ, শসা, কুমড়া, করলা- এসব সবজিতে ফ্রুট ব্যাগিং করা যেতে পারে।
এছাড়া তীব্র শীতে সবজি ফসলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সপ্তাহে একদিন ইমিডাক্লোরোপিড ও ম্যানকোজেব গ্রুপের কীটনাশক সঠিক মাত্রায় নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে করা যেতে পারে।
চারা পাতলাকরণঃ সবজি চারা লাগানোর পরে যদি ঘন হয় তাহলে চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে এবং যেসব চারা মারে যাবে সেই জায়গায় নতুন চারা লাগিয়ে গ্যাপ ফিলিং করা।
মালচিংঃ বিভিন্ন ধরণের জৈব উপাদানের মধ্যে গাছের বাকল, পাতা, কাঠের টুকরো দ্বারা গাছের শিকড়ের চারপাশে সবজি চারার ক্ষেত্রে এক ইঞ্চি ফাঁকা রেখে বাকি অংশে ১- ১.৫ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে দিতে হবে। পরবর্তীতে জৈব উপাদানগুলো মাটির সাথে মিশে মাটির গুণাগুণ ও পানি ধারন ক্ষমতা বাড়ায়, মাটির অপচয় ও আগাছা জন্মানো রোধ করে।
কুমড়াজাতীয় ফসলে অনেক সময় ফল ধারনের জন্য হাত দিয়ে পরাগায়ন করা হয় যাকে হাত পরাগায়ন বলে। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তর করতে হবে। এতে ফল ধারণ করবে। তবে খেয়াল রাখবেন, পরাগায়ন যেন সঠিকভাবে হয়।
শসার পুরুষ ও স্ত্রী ফুল উভয়ই সকালে ফোটে। পুরুষ ফুলের পরাগরেণু সর্বোচ্চ বেলা দুইটা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। কিন্তু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ড খুব কম সময়ের জন্য সক্রিয় থাকে বিধায় ফুল ফোটার দুই ঘণ্টার মধ্যে পরাগায়ন করতে হয়। করলায় সকাল ৬-৯ টা এবং লাউয়ে বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পরাগায়ন করা যাবে।
14 total views, 1 view today
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!