About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

কলা গাছের বাকল থেকে বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে টেকসই ও মানসম্পন্ন সুতা

Please don't forget to share this article

কলা গাছের বাকল থেকে সুতা বা ফাইবার তৈরিঃ

কলা গাছ থেকে সারা বছরই ভালো ফলন পাওয়া যায়। সমতল ও পাহাড়ী অঞ্চলে সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্যিকভাবেও বর্তমানে কলার উৎপাদন বেড়েছে। কলা গাছের বিকল্প কোন ব্যবহার না থাকার কারণে কলার ছড়া কাটার পর কলা গাছও কেটে ফেলা হতো। তবে বর্তমান সময়ে পরিত্যাক্ত কলার বাকল থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ভালোমানের ফাইবার বা সুতা। একটি কলা গাছের বাকল থেকে কম করে হলেও ২০০ গ্রাম সুতা উৎপাদন করা যায়।

‘আনন্দ বিল্ডিং কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ অফ স্মল হোল্ডারস ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ইতোমধ্যেই খাগড়াছড়িতে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরির প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ওয়েস্ট অ্যাগ্রো এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে এবং জার্মান দাতা সংস্থা ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফের অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পের শুরুতে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের কারণে বাকল থেকে সুতা তৈরি কিছুটা ধীরগতি ছিল।

বর্তমানে লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, মিঠাপুকুর, যশোর, টাঙ্গইল, খাগড়াছড়ি, ঠাকুরগাঁও সদরসহ দেশের সাত স্থানে কলাগাছ থেকে সুতা উৎপাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়াও বেসরকারি সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) এর সহায়তায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে কলাগাছের বাকল থেকে আঁশ ছাড়িয়ে সুতা তৈরি হচ্ছে। প্রকল্পটির প্রধান গবেষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কলা গাছের আঁশ নিয়ে তাদের গবেষণাটি শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে। প্রথমে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় কাজ শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি নিয়ে আসা হয় ময়মনসিংহ শহরে। গবেষণার জন্য দরকারি যন্ত্রপাতি রফিকুল ইসলাম নিজেই তৈরি করে নিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে রফিকুল এ আঁশ থেকে কাপড় তৈরিতে সাফল্য পেয়েছিলেন। বিশেষ প্রক্রিয়ায় যন্ত্রের সাহায্যে বাকল থেকে আঁশ বের করে আনা হয়। সেই আঁশ পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় তুলার রোল। এরপর স্পিনিং মেশিনে দিয়ে তৈরি করা হয় সুতা। সেই সুতাতেই তাঁতের সাহায্যে কাপড় তৈরি করা হয়। কয়েকটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে এই সুতায় তৈরি পোশাক কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। কাপড়ের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য মধুপুরে অত্যাধুনিক স্পিনিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। মান সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকলে কানাডাসহ আরও বেশকিছু দেশে এই কাপড় রপ্তানি শুরু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কলা গাছের বাকল থেকে তৈরিকৃত সুতা টেকসই ও মানসম্পন্ন। জুট বা কটনের সঙ্গে মিশ্রণে্র পরে এটি আরও টেকসই হয়। কলার বাকল থেকে প্রাপ্ত সুতা জুট বা কটনের সঙ্গে মিশ্রণে পেপার, হ্যান্ডি ক্রাফট, হ্যান্ড ব্যাগসহ নানা পণ্য তৈরি করা যায় বলেও জানান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আনন্দর নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান মিঞা। এছাড়াও কলার বাকল থেকে ফাইবার অংশ সংরক্ষণের পর অবশিষ্ট অংশ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়। প্রতি কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সারের মূল্য প্রায় ২০ টাকা।

একটি কলা গাছের বাকল থেকে কম করে হলেও ২০০ গ্রাম সুতা পাওয়া যায়। অর্থাৎ পাঁচটি কলা গাছের বাকল থেকে অন্তত এক কেজি সুতা পাওয়া যায়। তিনি জানান, প্রতিটি কলা গাছ ১৫ টাকা দামে কেনা যায়। তবে দূর থেকে কলাগাছ কিনতে গেলে পরিবহন খরচ বেড়ে প্রতি কলা গাছের দাম প্রায় ১৩০ টাকা পড়ে যায়।

প্রতি কেজি ফাইবাব বা সুতা উৎপাদনে একজন শ্রমিক ১৩ টাকা পেয়ে থাকেন। একজন শ্রমিক দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০ কেজি পর্যন্ত সুতা উৎপাদন করতে পারেন। শ্রমিকদের মতে লোডশেডিং এর তারতম্যের কারণে মাঝে মধ্যে উৎপাদন কমে সারা দিনে ৩০০ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়ে যায়।

কলা গাছ থেকে সুতা তৈরি করার কারণঃ নিম্নে উল্লিখিত কারণে কলা গাছ থেকে সূতা তৈরি করা হচ্ছে-

  1. কলা গাছের কাঁচামাল সহজ লভ্য।
  2. অল্প খরচে কলা কাছের বাকল থেকে সুতা তৈরি করা সম্ভব।
  3. শ্রমিক মুল্য তুলনামূলকভাবে কম।
  4. কম দামে উৎকৃষ্ট মানের পণ্য সরবরাহ করা যায়।
  5. কলাগাছের ছাল থেকে কাপড় বানানোর তন্তু, দড়ি, শৌখিন জিনিসপত্র এবং তাঁবু বানানোর জন্য উৎকৃষ্ট মানের সুতা বানানো যায়।
  6. প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যে কলা গাছ থেকে প্রাপ্ত তন্তু সবচেয়ে শক্ত।
  7. কলা গাছের আর্দ্রতা ধরে রাখা এবং ত্যাগ করার ক্ষমতা অনেক বেশি।
  8. কৃত্রিম তন্তুর বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার করা যায়।

কলা থেকে উৎপাদিত এ আঁশ কিনছে ঢাকার ওয়েস্ট অ্যাগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম ও মাহমুদুজ্জামান মৃদুল জানান, কলা গাছের ডোঙা ও ডাঁটা থেকে উৎপাদিত আঁশের তৈরি সুতার চাহিদা অনেক বেশি। এই সুতা দিয়ে দামি শাড়ি-কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। এ সুতা ভারত হয়ে চীন, জাপান ও জার্মানি পর্যন্ত যাচ্ছে। দেশে তৈরি একটি মেশিনে আট ঘণ্টায় মোট উৎপাদন করা যায় ৪০ কেজি আঁশ। এই প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে দিনাজপুরে এই মেশিন তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি মেশিনের দাম পড়বে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

সরকারি সহযোগিতা পেলে অদূর ভবিষ্যতে এ শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। কেননা  বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশেও কলা গাছের তৈরি সুতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত