About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি। ঢেঁড়সের পোকা- মাকড় ও রোগ-বালাই দমন

Please don't forget to share this article

ঢেঁড়স আমাদের দেশে বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয় কেননা এটি একটি জনপ্রিয় সবজি। ঢেঁড়স মূলত শীতকালীন সবজী হলেও বর্তমানে এটি সারা বছরই চাষ করা যায়। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োজিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম  ও বিভিন্ন  খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে, এছাড়াও  এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

মাটি ও জলবায়ুঃ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি ঢেঁড়শ চাষের জন্য উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেঁল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা সম্ভব। তবে উঞ্চ জলবায়ু তথা শুষ্ক এবং আর্দ্র অবস্থায় ভাল জন্মে।

জমি তৈরিঃ জমি ৫-৬ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। ঢেলা ভেঙ্গে এবং আগাছ পরিষ্কার করে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।

জাতঃ

বারি ঢেঁড়স-১ : এটি উচ্চ ফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল ফুটার ৫-৬ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ১ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩০ টি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৪-১৬ টন।
বারি ঢেঁড়স-২ : এটিও উচ্চ ফলনশীল জাত তবে আগাম জাত। বীজ বপনের ৪০-৪২ দিনের মধ্যে ফুল আসে। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৩২-৩৮ টি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৭-২১ টন। এছাড়াও হোয়াইট ভেলভেট, কাবুলি ডোয়ার্ফ, ডোয়ার্ফ প্রলিফিক, ঝুম আর্লি, শ্রাবনী, পুশা মলমলি, পুশা সাওয়ানী, পেন্টা গ্রীন, ওকে-০২৮৫, শাউনি,পারবনি কানি, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন ইত্যাদি ঢেঁড়সের জাতের চাষ হচ্ছে।

বীজ বপনের সময়ঃ
খরিপ-১:  মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ
খরিপ-২:  মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে।
রবি    : মধ্য আগষ্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর

সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা যায়। তবে ফাল্গুন ,চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

বীজের পরিমাণঃ শতক প্রতি  ২০ গ্রাম এবং হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।

বীজ বপনঃ বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি করে বীজ বপণ করা হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৩০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে বীজ বুনতে হয়। বীজ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।

সার প্রয়োগঃ ভালো ফলন পেতে হলে নীচের সারণী অনুযায় সার প্রয়োগ করতে হবে। ( হেক্টর প্রতি )

সার মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) শেষ চাষের
সময় দেয়
পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
প্রথম কিস্তি দ্বিতীয় কিস্তি তৃতীয় কিস্তি
গোবর    ১৪ টন   সব
ইউরিয়া ১৫০ কেজি ৭৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি
টিএসপি ১০০ কেজি সব
এমওপি ১৫০ কেজি ৭৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি ২৫ কেজি
জিপসাম ৭০ কেজি সব
বোরণ ২ কেজি সব
মলিবডেনাম ০.৬ কেজি সব

অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ 
গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। পানি সেচ দেওয়ার পর জমিতে ‘জো’ আসলে কোঁদাল দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হয়। এত মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং মাটি অনেক দিন রস ধরে রাখতে পারে। আগাম মৌসুমে ঢেঁড়স চাষ করলে পানি সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। মাটির প্রকারভেদ অনুসারে ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেওয়া দরকের। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেমি. উঁচু করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।

পোকা- মাকড় ও রোগ-বালাই দমন

পোকা- মাকড়:

পাতা মোড়ানো পোকা: এই পোকা ঢেঁড়সের কচি পাতা মোড়ায় এবং ভিতরে থেকে পাতার সবুজ অংশ খায়।  আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে সুমিথিয়ন/ফলিথিয়ন /নিক্সইয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি/ লিটার পানিতে (হেক্টর প্রতি)  মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ডগা, কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা: এ পোকার কীড়া গাছের কচি  ফল ও কান্ড ছিদ্র করে ও ভিতরে কুড়ে কুড়ে খায়। রিপকর্ড ১ মিলি/ সবিক্রন ২ মিলি /সুমিথিয়ন ২ মিলি /ডায়াজিনন ২ মিলি /লিটার পানিতে (হেক্টর প্রতি ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

জ্যাসিড বা সাদা মাছি পোকা: এ পোকা ঢেঁড়সের চারা গাছ থেকে শেষ পর্যন্ত পাতার রস চুষে খায়।  আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ ও কুঁকড়ে যায়। টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম / লিটার  লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।

রোগ বালাই:

ঢ়েঁড়সের মোজাইক ভাইরাস রোগঃ এ রোগে পাতাগুলোতে হলুদ ও সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলন খুব কমে যায়। এ রোগের কোন ঔষধ নেই। আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে পানি নিষ্কাশন করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। এ রোগ সাধারণত সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার পানিতে  স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করা ভালো। যেমন- বারি ঢেঁড়স-১, ওকে-০২৮৫ জাত।

ঢ়েঁড়সের পাতার শিরা স্বচ্ছতা রোগঃ সব পাতাই হলুদ ও সবুজ ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। পাতার শিরাগুলো স্বচ্ছ ও হলুদ হয়ে যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয়। ভাইরাসের বাহক পোকা সাদা মাছি এ রোগ ছড়ায়। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার পানিতে  স্প্রে করতে হবে।

ঢ়েঁড়সের পাতার দাগ রোগঃ অল্টারনারিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রমনের ফলে পাতার উপরে বিভিন্ন আকৃতির গোলাকার বাদামি রং পড়ে। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝরে পরে। ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম/ রোভরাল ২ গ্রাম/ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার পানিতে পাতায় ২/১ টি দাগ দেখা দিলে স্প্রে করতে হবে।

ঢ়েঁড়সের শিকড়ের গিঁট রোগঃ আক্রান্ত গাছের শিকড়ে প্রচুর গিঁট দেখা যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয় এবং ফল কম হয়। ফুরাডান/মিরাল ব্যবহার করতে হবে।

সবজির জন্য ফসল সংগ্রহঃ চারা গজানোর ৪০-৪৫ দিন পর ঢেঁড়স গাছ ফুল দিতে শুরু করে। ফুল বের হওয়ার ৩ দিন (গ্রীষ্মকাল) এবং ৫ দিন (শীতকাল) পর ঢেঁড়স ৬-১০ সে.মি. লম্বা হয়। এ সময় ঢেঁড়সের ফল নরম থাকে এবং আঙ্গুল দ্বারা সহজেই ভাঙ্গা যায়। সবজি হিসেবে ঢেঁড়সের গুণাগুণ ঠিক রাখতে হলে ধারালো ছুরির সাহায্যে গাছ থেকে ঢেঁড়স কাটা উচিত। সবজি হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ৮-১০ টন/হেক্টর (বারি ঢেঁড়স-১ এ ১৪-১৬ টন/হেক্টর )।

বীজের জন্য ফসল সংগ্রহঃ বীজ বুনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি/ হেক্টর।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত