About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

তামাক চাষ পদ্ধতি, সারের ব্যবহার, পরিচর্যা ও কিউরিং

Please don't forget to share this article

তামাক বাংলাদেশের একটি অর্থকরী এবং নেশা জাতীয় ফসল। তামাক Solanaceae পরিবারের, যার ইংরেজী নাম-Tobacco, বৈজ্ঞানিক নাম- Nicotina tabacum/Nicotina rustica । বাংলাদেশে রংপুর, কুষ্টিয়া ছাড়াও যশোর, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া ও ময়মনসিংহ এলাকায়ও কিছু ভার্জিনিয়া তামাকের চাষ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বার্ষিক প্রায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়।

বহুজাতিক এবং দেশি তামাকজাত শিল্পকারখানার সহযোগিতায় রংপুর, কুষ্টিয়া ও সিলেটে উন্নতমানের তামাক চাষ হচ্ছে। ইদানিং যশোর অঞ্চলে শৈলকুপা, ঝিনাইদহ, হরিনাকুন্ড, কোট চাঁদপুর এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলে চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কোতোয়ালী থানা এলাকায় বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানির তত্ত্বাবধায়নে বার্ষিক প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে উন্নতমানের ভার্জিনিয়া তামাকের আবাদ করা হয়।

উৎপত্তি ও বিস্তৃতিঃ তামাকের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রাজিল, জাপান , তুরস্ক প্রভৃতি দেশে যথেষ্ট তামাক উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি তামাকের আবাদ হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তারাঞ্চলে রবি মৌসুমে ব্যাপক তামাকের চাষ হয়।

তামাকের ব্যবহারঃ তামাক একটি অন্যতম নেশা জাতীয় ফসল। ধূমপানের উদ্দেশ্যে সিগারেট, বিড়ি, পাইপ ও হুক্কা, চিবিয়ে খাওয়ার জন্যে জর্দা, দোক্তা, খৈনী এবং নাকে দেয়ার জন্য নস্যি, মুখে দেয়া-দাঁত মাজার জন্যে গুল ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তামাক ব্যবহৃত হয়। তামাক ভিজানো পানি কীটপতঙ্গ দমনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

তবে তামাক সারা বিশ্বব্যাপী একটি বিতর্কিত শস্য। কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করেন তামাক সেবনে মানব দেহে ক্যান্সার বা অনুরূপ দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়।

জলবায়ু ও মাটিঃ
জলবায়ুঃ
তামাক চাষের জন্য উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু একান্ত প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুতে তামাকের চাষ হচ্ছে। ২২ c – ২৬ c তাপমাত্রায় তামাক ভালো জন্মে। অতিবৃষ্টি বা পানিবদ্ধতা তামাক চাষের জন্য ক্ষতিকর। ১৪০০-২১০০ মিমিঃ বার্ষিক বৃষ্টিপাত তামাক চাষের জন্য আর্দশ। গাছের আঙ্গিক বৃদ্ধির সময় বায়ুর আদ্রতা ৫০% এর কম থাকা উচিত নয়। পাতা পরিপক্কতায় পৌঁছলে বায়ুর আর্দ্রতা একটু কম থাকা ভাল। পাতা সংগ্রহকালে বৃষ্টিপাত হলে পাতার গুণগতমান নিম্ন হয়। তামাক বীজ অংকুরোদগমের জন্য ৩০ c তাপমাত্রা প্রয়োজন।

মাটিঃ সব রকম মাটিতেই তামাক হয়। তবে হালকা দোআঁশ মাটিতে তামাক ভালো জন্মে। জমি অধিক জৈব পদার্থযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। মাটিতে পটাশিয়ামের আদৌ কোন ঘাটতি থাকলে তামাক পাতার স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ ঠিক থাকে না। এজন্য তামাক চাষের জমিতে ২ বছর অন্তর অন্তর সবুজ সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সুনিষ্কাশিত উর্বর বেঁলে-দোআঁশ মাটি তামাক চাষের জন্য অতি উত্তম।

প্রজাতি ও জাতঃ তামাকের দুটি প্রজাতি ভার্জিনিয়া (Nicotiana tobacum ) এবং বিলাতি বা মতিহারি (Nicotiana Rustica) তামাক এদেশে চাষ করা হয়। ভার্জিনিয়া দ্বারা সিগারেট ও চুরুট প্রস্তুত হয় এবং ২য়টি দ্বারা হুক্কায় ব্যবহৃত তামাক তৈরি হয়।

বাংলাদেশ তামাক উন্নয়ন বোর্ড নিম্নলিখিত জাতসমূহ এদেশে আবাদের জন্য নির্বাচন করেছে-

(১)সিগারেট তামাকঃ (ক) হ্যারিসন স্পেশাল, (খ) সেসমারিয়া, (গ) N.C – ৯৫, (ঘ) পোকার-২৫৪, (ঙ) হোয়াইট বার্লি, (চ) স্পেট জি, (ছ) ভার্জিনিয়া গোল আরিনকো।

(২) চুরুট তামাকঃ (ক) সুমাত্রা (চুরুট জড়ানোর (Wrapper) জন্যে) (খ) ম্যানিলা (গ) কেয়ামন (চুরুট ভর্তির (filler) জন্যে)

(৩) বিড়ি তামাকঃ (ক) কেলিও, (খ) নিপনী

(৪) হুক্কা তামাকঃ (ক) মতিহারী, (খ) ভেংগি, (গ) T – ৫০

বীজ বাছাইঃ বীজে ধুলাবালি, কাঁকড়, অন্য জাতের বীজ ও অপুষ্ট বীজ না থাকা বাঞ্ছনীয়। ভেজাল বীজ হতে বিভিন্ন জাতের তামাক উৎপন্ন হয়। সেহেতু কোন নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান অথবা কৃষি সমপ্রসারন বিভাগের স্থানীয় উপসহকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ভালো বীজ সংগ্রহ করতে হয়।

বীজতলা তৈরিঃ বীজতলার জন্যে উঁচু, ছায়াহীন নতুন জমি বাছাই করতে হয়। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে মাটিতে ‘জো’ বুঝে ৮-১০ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি খুব ঝুরঝুরা করতে হয়। জমির চারদিকে নালা কেটে ১২০ x ৩০৫ x ১৫ সেন্টিমিটার আকারের বীজতলা তৈরি করতে হবে। এরূপ পরপর দুটি বীজতলার মধ্যে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার নালা তৈরি করে উক্ত নালার মাটি দিয়েই বীজতলা উঁচু করতে হবে। প্রতি খন্ড বীজতলায় ৫-৬ কেজি গোবর সার চাষ করার সময় দিতে হবে। বীজতলা তৈরির শেষ পর্যায়ে প্রতি খন্ডে ২০/২৫ কেজি আবর্জনা সার, ৪৫ গ্রাম ইউরিয়া, ৪৫ গ্রাম K2SO2 বা ১৮০ গ্রাম ছাই দিতে হয়।

বীজ বপনঃ সবজির মতো বীজতলায় চারা তৈরী করে লাগান হয়। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি হতে তামাকের বীজ বপন শুরু করতে হয়। প্রতি বীজতলায় [৩০৫ সেমি x ১২০ সেমি বা (১০ ফুট x ৪ ফুট)] ১০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। ১ বিঘা (১৩৩৮ বর্গ মি) জমির জন্যে উক্ত পরিমাণ বীজই যথেষ্ট।

জমি তৈরিঃ পূর্ববর্তী ফসল কাটার পর পরই জমিতে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ভাদ্র মাসে। ১০-১২ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি উত্তমরূপে ঝুরঝুরে ও আগাছামুক্ত করতে হয়।

চারা তোলা ও রোপণঃ চারাকে শক্ত ও কষ্টসহিষ্ণু করে তোলার জন্যে বীজতলা হতে চারা তোলার ৩/৪ দিন পূর্ব হতেই বীজতলায় পানি সেচ বন্ধ করতে হয় যাতে চারা নতুন জমিতে লাগানোর আঘাত সহ্য করতে পারে। তবে চারা তোলার আগে পানি দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে দিতে হয়, যাতে অতি সহজেই শিকড়সহ চারা তোলা যায়।

পুরো কার্তিক মাস সিগারেট তামাকের চারা লাগান যায়। হুক্কা তামাকের চারা অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত রোপণ করা যায়। বিড়ি তামাক চারা কার্তিক মাসে রোপণ করতে হয়। সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করা হয়। সারি হতে সারির দুরত্ব ১ মিটার (৩ ফুট) ও চারা হতে চারার দুরত্ব ৬০ সেমিঃ (২ ফুট) হওয়া বাঞ্ছনীয়। সকালের দিকে বীজতলা হতে চারা তুলে ঐ বেলার মধ্যে ক্ষেতে চারা রোপণ করা উচিত। চারা রোপণের পর প্রথম ৩/৪ দিন সকাল-বিকাল ক্ষেতে পানি দিতে হয়।

সার প্রয়োগঃ হেক্টর প্রতি সারের মাত্রা নিম্নরূপঃ

সারের নাম

মাত্রা
ইউরিয়া ৭৫-৮৫ কেজি
টিএসপি ৫০-৫৫ কেজি
পটাশিয়াম সালফেট ৭৫-৮৫ কেজি

পটাশ সারের পরিবর্তে ১৪০ কেজি কচুরীপানার ছাই বা ৪/৫ কুইন্টাল সাধারণ ছাই প্রয়োগ করা যায়।

তামাকের জমিতে অধিক পরিমাণে গোবর সার বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে ক্ষেতে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন সরবরাহ করলে তামাক পাতার গুনগত মান নিম্ন হয়ে যায়। অত্যাধিক গোবর সার প্রয়োগ করলে তামাক পাতা পুরু হয়ে পড়ে, পাতার সুগন্ধ নষ্ট হয় নিকোটিনের পরিমান বৃদ্ধি পায়। তবে হুক্কা তামাক পাতার তেমন কোন পরিবর্তন হয় না।

জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে সারের পরিমান নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত জমি তৈরির সময় ৫০-৬০ কুইন্টাল গোবর সার প্রয়োগ করা হয়। একই সময় হেক্টর প্রতি ৮০ কেজি মিউরেট অব পটাশ ( পটাশ সারের পরিবর্তে পর্যাপ্ত ছাই) প্রয়োগ করা যায়।

এছাড়া জমি তৈরির শেষ চাষের সময় হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি টিএসপি সারও প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে পর্যাপ্ত গোবর সার দ্বিতীয় ও তৃতীয় চাষের সময় প্রয়োগ করা হলে শেষ চাষের সময় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। তবে পর্যাপ্ত জৈব সার (গোবর বা কম্পোষ্ট সার) প্রয়োগ করা না হলে ঐ একই সময় হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ৬/৭ সপ্তাহ পরে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করে মাটি কুপিয়ে দিতে হয় এবং আগাছা নিড়িয়ে দিতে হয়।

অন্তবর্তীপরিচর্যাঃ চারা রোপণের ৭/৮ দিনের মধ্যে জমিতে চারা নতুন শিকড় ছাড়ে। এসময় কোদাল বা খুরপি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হয়। ঢেলার সৃষ্টি হলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
আগাছা নিড়িয়ে ফেলতে হবে। তামাক গাছ জন্মানোর ঋতুতে কমপক্ষে ৩ বার আগাছা নিড়িয়ে দিতে হবে। শেষ নিড়ানির সময় দুই সারির মাঝখানের মাটি তুলে গাছের গোড়ায় দিতে হয়। ফলে দুই সারির মাঝে পানি নিষ্কাশনের ছোট খাটো নালার সৃষ্টি হয়। এর ফলে গাছও বেশ শক্ত ও পুষ্ট হয়।

তামাক গাছের বৃদ্ধির জন্য তেমন বেশি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। জমিতে পানির অবস্থা বা রস বুঝে ২/৩ বার সেচ দিতে হতে পারে। হঠাৎ বৃষ্টি হলেও যেন পানিবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। চারা রোপণের পরপরই অনেক সময় বৃষ্টি হয় এবং এতে জমি চটা বেঁধে যায় (surface crust)। ‘জো’ এলেই উক্ত চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

আগল ভাঙ্গাঃ গাছে ফুল আসার সাথে সাথে আগল ভাঙ্গার কাজ শুরু করতে হয়। আগল ভাঙ্গার ফলে তামাকের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং উৎকৃষ্ট মানের তামাক হয়। ১৫-১৮ টি পাতা রেখে গাছের আগা ভাঙ্গাকে আগল ভাঙ্গা (Topping) বলা হয়।

কুশি ভাঙ্গাঃ আগল ভাঙ্গার কয়েকদিন পরেই পাতার গোড়া হতে কুশি বের হয় এবং দ্রুত বেড়ে তা গাছকে দুর্বল করে ফেলে। তাই কুশিগুলো ৮-১০ সেমিঃ হলেই ভেঙ্গে ফেলতে হয়। তামাক গাছের নিচের ৩/৪ টি পাতা কে বিষ পাতা বলে এবং ঐ পাতাগুলেকে কেটে ফেলতে হয়। ফলে ক্ষেতে আলো বাতাস ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। এতে বাকি পাতাগুলো পুষ্ট হয়।

রোগ ও কীট দমনঃ তামাকের রোগগুলোর মধ্যে ‘মোজাইক রোগ’, ‘পাতা কুঁকড়ানো’, ‘ঢলে পড়া রোগ’, ‘চারা পচা রোগ’রোগ ইত্যাদি।

তামাক উৎপাদন এলাকায় এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ঢলে পড়া রোগ হয়। এছাড়া এক প্রকার ভাইরাসের আক্রমণে পাতা কুঁকড়ানো রোগ হয়। এ সমস্ত রোগ আক্রমণের ফলে তামাকের ফলন যথেষ্ট কমে যায় এবং তামাক নিম্নমানের হয়। ভাইরাসের এরূপ সংক্রামণ কোন পাতায় দেখা মাত্র ঐ গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। “মোজাইক” রোগেও এরূপ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

কাটুই পোকা, লেদাপোকা, জাবপোকা ইত্যাদি পোকার উপদ্রব দেখা যায়। কাটুই পোকার উপদ্রবে তামাক গাছের কচি চারার মাটির সামান্য উপরে বা নিচে দিয়ে কেটে ফেলে। দিনের বেলা সূর্যের প্রখর তাপ সহ্য করতে না পেরে আলোক উজ্জ্বল দিনে কাটুই পোকা বা এর কীড়া মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে এবং রাতের বেলায় গাছ আক্রমণ করে। জাব পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদিও তামাক গাছকে আক্রমণ করে।

সাধারণত উৎপাদন ঋতুতে ১০-১২ দিন পর পর অনুমোদিত মাত্রায় কীটনাশক ছিটিয়ে দিলে কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

ফসল তোলা ও কিউরিং তামাক তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের ফসল। পাতাই তামাকের প্রধান ফসল। তাই উপযুক্ত সময়ে পাতা সংগ্রহ করতে হয়। সিগারেট তামাকের পাতা মাঘ-ফাল্গুন মাসে সংগ্রহ করতে হয়। পাতার রং হলদে সবুজ হলে গোড়ার দিক হতে পাতা তুলে নেওয়া হয়। হুক্কা তামাক পাতা চৈত্র মাস হতে সংগ্রহ করতে হয়। পাতা যখন সজীবতা হারাতে শুরু করে তখনই পাতা সংগ্রহ শুরু করতে হয়। একবারে প্রতি গাছ হতে ১-৩ টির বেশি পাতা ভাঙ্গা উচিত নয়। পাতার পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে ৪-৫ বারে পাতা সংগ্রহ করতে হয়। অবশ্য অনেক সময় গোটা গাছ কেটে ফসল তোলা হয়। কাটা গাছের কান্ড সমান দুই বা চার ভাগে লম্বালম্বি চিরে নিয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তামাক পাতা শুকোবার ওপর তামাকের গুনাগুন নির্ভর করে। সাধারনত নানা উপায়ে তামাকের পাতা শুকানো হয়। যেমন:

(১)গর্তে শুকানো ( Pit Curing)ঃ তিন ফুট (৯০ সেমি:) লম্বা, তিন ফুট (৯০ সেমি:) চওড়া ও আড়াই ফুট (৭৫ সে:মি:) গভীর করে গর্ত করে গর্তের ভেতরের দেওয়ালে ও তলায় খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রোদে নেতিয়ে পড়া তামাকের পাতা সত্মরে সত্মরে গর্তে সাজানো হয় এবং খড় বা থলে দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে পাতা শুকিয়ে যাবে। পরে প্রয়োজন হলে এসব পাতা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। সাধারনত বিড়ি, জর্দা, হুকো, ও নস্যির তামাক এই পদ্ধতিতে শুকানো হয়।

(২) ছায়ায় শুকানোঃ এই পদ্ধতিতে তামাক পাতা শুকানোর জন্য ঘরের মধ্যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তাতে দড়ি বা তার লম্বালম্বি করে টাঙান হয়। তামাক পাতা তুলে সেগুলোকে সুতো দিয়ে দড়ি বা তার দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবে পাতা হলদে হয়ে যায়। তখন সে পাতাগুলো রোদে শুকিয়ে নিয়ে প্যাক করা হয়। কমদামী সিগারেট, বিড়ি, জর্দা প্রভৃতির জন্য তামাক এই পদ্ধতিতে শুকানো হয়।

(৩) তাপ শুকানোঃ এ প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষ ধরনের ঘর দরকার, যাকে ‘বার্ন হাউস’ বলে। সাধরণত বার্ন হাউস ছোট, মাঝারি ও বড় করা হয়, যার মাপ- ৩.৫ x ২.৫ x ৩.৫ মিঃ, ৩.৫ x ৩.৫ x ৫.০ মিঃ এবং ৫ x৫ x ৬.৫ মিঃ হয় এবং তাপ প্রবাহের জন্য চুল্লি ও বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেটর রাখা হয়।

১৪/১৫ টি পাতার মুঠি একটি দেড় মিটার লম্বা বাঁশের কাঠিতে এমনভাবে ঝুলাতে হয়, যেন পাতাগুলো নিচের দিকে ঝুলে থাকে। অতঃপর তামাক পাতার মুঠি সমৃদ্ধ বাঁশের কাঠি বার্ন হাউসের ভেতর কাঠের তাকের উপর ২০ সেঃমিঃ-২৫ সেঃমিঃ পর পর সাজাতে হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্যে বার্নের ভেতরে একটি কিউরোমিটার ঝুলিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। তাপ শোধন কাজটি তিন পর্যায়ে সমাপ্ত হয়:-
পাতা হলুদাভ করাঃ এ পর্যায়ে বার্নের তাপমাত্রা ২৭-৩৮ ঈ এবং আর্দ্রতা ৮০%-৯০% রাখতে হয়। নিন্মরূপ ধারায় তাপমাত্রা বাড়ালে পাতার রঙ ভাল হয়:-

প্রথম ১২ ঘন্টা ২৭ সেঃ /৮০ ফাঃ
পরবর্তী ৬ ঘন্টা ৩০ সেঃ /৮৫ ফাঃ
পরবর্তী ৬ ঘন্টা ৩৩ সেঃ /৯০ ফাঃ
পরবর্তী ৬ ঘন্টা ৩৮ সেঃ /১০০ ফাঃ

মোটা ডাটা শুকানোঃ এ অবস্থায় প্রতি ২ ঘন্টা পর পর ১-১.৫ C করে ৫০ C পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ানো হলে পাতার রঙ খুব ভাল হয়। ৩৮ C – ৫০ C উত্তাপের সময় বার্নের ভেতরে আর্দ্রতা শতকরা ২০ ভাগের বেশি রাখা ঠিক নয়। মোটা ডাঁটা ছাড়া পাতার সমস্ত অংশ শুকাতে ৫৮ C তাপ চালু রাখতে হয়।
মোটা ডাঁটা শুকানোঃ মোটা ডাঁটা শুকানোর জন্য ৫০ C – ৬৬ C তাপমাত্রায় ডাঁটা ২০-৩০ ঘন্টা রাখতে হয়।

মাটিতে শুকানোঃ তামাক পাতা বা পাতাসহ তামাক গাছ লম্বালম্বি করে চিরে দু-একদিন গাদা করে রাখা হয়। তারপর সকালের দিকে তামাক পাতা বা চেরা ডাঁটাগুলি রোদে দেওয়া হয়। বিকাল পর্যন্ত শুকানো হয়। সন্ধ্যার সময় ঘরে এনে গাদা করে রাখা হয় এবং পরের দিন সকালে আগের মতো করে শুকোতে দেওয়া হয়। তামাক ভালভাবে শুকিয়ে গেলে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে সংক্ষণ করা হয়। হুকো, বিড়ি প্রভৃতির জন্য তামাক এই পদ্ধতিতে শুকানো হয়।

ফলনঃ বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত তামাকের হেক্টর প্রতি ফলন গড়ে ৭৫০-৯০০ কেজি (একরে ৮-১০ মণ)। যথাযথ পরিচর্যা করে হেক্টর প্রতি ১৪ কুইন্টাল ফলন (পাতা শোধন করার পরে ফলন নির্ণয় করা হয়) পেয়েছে বলে জানা গেছে।

বিঃ দ্রাঃ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৩ সালের সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী  বাংলাদেশে তামাক উৎপাদন নিরুৎসাহিত করার জন্য জোর দেওয়া হয়েছে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত