প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতি ( ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে )। এ পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধা
মালচিং বা আচ্ছাদন পদ্ধতিতে চাষাবাদের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে । ‘মালচ’ কথার অর্থ মাটি ঢেকে দেওয়া। মূলত পুরানো, শুকনো বা কাঁচা পাতা, বিচালি বা খড়, কচুরিপানা ইত্যাদি দিয়ে মাটি ঢেকে দেওয়ার পদ্ধতিই হলো মালচিং যা আগের থেকেই আমাদের দেশে চালু আছে। কিন্তু কৃষিতে আধুনিকীকরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে প্লাস্টিক মালচিং-এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটি আধুনিক চাষাবাদের একটি উন্নত পদ্ধতি। এর ফলে ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। তাছাড়া, ভালো ফলনের জন্য মাটি ঢেকে দিয়ে আবাদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের সিলেটে, হবিগঞ্জে এবং মৌলভীবাজারে প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপি উৎপাদন করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেক খরচ কমানো সম্ভব।
প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতি: সাধারণ মালচিং এর চেয়ে প্লাস্টিক মালচিং একটু ভিন্ন। পলিথিন জাতীয় এ সীটের উপরের রঙ সিলভার এবং নিচের রঙ কালো। সবজি চাষের ক্ষেত্রে এটি উপযোগী পদ্ধতি। বেলে ও দোআঁশ মাটির ক্ষেত্রে এটি উপযোগী পদ্ধতি। একটি সারির জন্য পাতলা প্লাস্টিকের থান দূরত্ব অনুযায়ী কেটে নিতে হবে। আর এই থানের উপর ফসল অনুযায়ী ফুটো করে নিতে হবে। এর পর ফসল ভিত্তিক প্রয়োজনীয় জৈব সার বেশি পরিমাণে রাখতে হবে, যাতে কোনও নুড়ি, পাথর, ঢেলা না থাকে। এর পর একটি করে থান শিট মাটির উপর বিছিয়ে দিতে হবে। শিটের ধারগুলি চার থেকে ছ’ইঞ্চি মাটির গভীরে ঢুকিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে। যা প্লাস্টিকগুলিকে মাটির সঙ্গে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এবার ফুটোগুলির ভিতর দিয়ে বীজ বা চারা রোপন করতে হবে। মালচিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত হলো ড্রিপ বা বিন্দু সেচ। যদি তার সুযোগ না থাকে তাহলে এক একটি সারির পর ছোট নালা তৈরি করেও সেচ দেওয়া যায়। প্লাস্টিকগুলি ৬-৭ বার একই ধরনের ফসলের চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব।
প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধা:
পানি সংরক্ষণ: ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। কারণ প্লাস্টিক মালচিং ব্যবহারের ফলে মাটির রসের বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মাটির উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তা ওই প্লাস্টিকের আবরণে বাধা পেয়ে ঘনীভূত হয়। যা বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। এতে জমিতে দু’টি সেচ পর্বের ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়। ফলে সেচ কম লাগে অর্থাৎ সেচের খরচ কম হয়। সেচ বা বৃষ্টির পানি শুধুমাত্র প্লাস্টিকের ফুটো করার অংশ দিয়ে শিকড়ের কাছের অংশের মাটিতে প্রবেশ করে। এর মাধ্যমে পানির যথাযথ ব্যাবহার ও সংরক্ষণ সম্ভব হয়। ভিতরের রঙ কালো হওয়ায় পানি ধরে রাখার পাশাপাশি এই রঙের কারণে গাছের শিকড় বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদন হয় বেশি। এ পদ্ধতিতে ৭০% পর্যন্ত পানির অপচয় কমানো যায়।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ: প্লাস্টিক মালচিং এ যেহেতু ফুটো করা অংশ দিয়ে গাছ বেড়িয়ে আসে। মাঝের ঢাকা অংশে থেকে আগাছা বের হতে পারে না। প্লাস্টিক যদি কালো রঙের হয় তবে সূর্যালোক ঢুকতে পারে না। ফলে সালোকসংশ্লেষ করতে না পারায় মাঝের অংশের আগাছা মারা যায়। ফলে আগাছানাশকের জন্য শ্রমিকের খরচ কমে যায়।
পোকা নিয়ন্ত্রণ : মালচিংয়ের ফলে পোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিমাটোড বা ফসলে কৃমির আক্রমণ রোধ হয়। পলিথিন জাতীয় এ সীটের উপরের রঙ সিলভার এবং নিচের রঙ কালো। সিলভার রঙ হওয়ায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় ফলে পোকা বসতে পারে না। গাছে পোকা ধরে কম।
সার ব্যবহার হ্রাস : এই পদ্ধতি ব্যবহারে শিকড়ের কাছের স্থানে সার প্রয়োগ করার জন্য চাষে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সংখ্যাও অনেক কমে যায়। ফলে খরচ কমানো সম্ভব হয়।
দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম: প্লাস্টিক শিট দিয়ে মাটি ঢেকে রাখার ফলে মাটির ঢাকা অংশের উষ্ণতা রাতে এবং শীতকালে পরিবেশের থেকে বেশি হয়। ফলে বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম দ্রুত সম্পন্ন হয়। এছাড়া শীতকালে মালচ ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব।
ফলের রং ধারনঃ প্লাস্টিক মালচিং এর প্রতিফলিত আলো ফলের রঙ ধারনে সহায়তা করে।
সীমাবদ্ধতা: কচুরিপানা, জৈবসার, খড় ইত্যাদির অপেক্ষা প্লাস্টিক মালচিং ব্যয়সাপেক্ষ। গ্রীষ্মকালে কালো বা মোটা প্লস্টিক ব্যাবহার করলে উষ্ণতা বেড়ে যায়। ফলে চারা পোড়া বা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
বর্তমান সময়ের অধিক পরিমাণে শেলো মিশিন ব্যবহারের কারণে পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। তাই প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে বাঁচানো যায় পানির অপচয়। এছাড়া উৎপাদন খরচ কমিয়ে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়।
পাহাড়ি এলাকা এমনকি টিলা, পাহাড়ের ঢালে বিশেষ করে লালমাটি এলাকায় স্বল্প খরচে মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
How useful was this post?
Click on a star to rate it!
We are sorry that this post was not useful for you!
Let us improve this post!
Thanks for your feedback!