About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

লেটুস পাতা । টবে লেটুস চাষ পদ্ধতি । এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

Please don't forget to share this article

লেটুস (Lactuca sativa) ডেজি (daisy) পরিবারের এস্টেরাসি গোত্রের একটি বার্ষিক উদ্ভিদ। লেটুস ও অন্যান্য শাকসবজি চাষের জন্য জমি বা বাগানই ছাড়াও শহরে উৎপাদনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। শাকসবজি উৎপাদনের জন্য যদি একখণ্ড জমি না থাকে তাহলে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সার ও মাটি ভরে খুব সহজেই শাকসবজি চাষ করা যায়।

লেটুসের জাতঃ লেটুসের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এসবের মধ্যে বিগ বোস্টন, হোয়াইট বোস্টন, প্যারিস হোয়াইট, গ্র্যান্ড ব্যাপিড, নিউইয়র্ক-৫১৫, ইম্পিরিয়াল-৫৪, সিম্পসন, কিং ক্রাউন, কুইন ক্রাউন, ডার্ক, গ্রিন, গ্রেটলেক উল্লেখযোগ্য।

লেটুসের পুষ্টিগুণঃ লেটুস পুষ্টিকর পাতা জাতীয় সবজি যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, ক্যালরি, ভিটামিন এ, বি-১, বি-২, বি-৩ এবং সি। প্রতি ১০০ গ্রাম লেটুসে আছে ১৫ ক্যালোরি, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৯৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ২.৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৪ গ্রাম প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম।

লেটুস পাতার ব্যবহারঃ লেটুস একটি আঁশযুক্ত ও পাতা জাতীয় সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লেটুস গাছের পাতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ফাস্টফুড, সালাদে কিংবা রান্নায় এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেটুস পাতা কাঁচাই খাওয়া যায়।

লেটুস পাতার উপকারিতাঃ

  • লেটুস একটি আঁশযুক্ত সবজি বিধায় দ্রুত হজম হয়। এতে অতি অল্প পরিমাণ কোলেস্টরেল রয়েছে এবং হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
  • কিডনির সমস্যার জন্য যেসব রোগীদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় তাদের জন্য লেটুসপাতা ভীষণ উপকারী।
  • এই পাতার সোডিয়াম, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ শরীরের যেকোনো অঙ্গে পানি জমে যাওয়া রোধ করে।
  • লেটুসপাতাতে রয়েছে ৯৫.৫ গ্রাম পানি। এতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ার জন্য মোটা ব্যক্তিদের চর্বি ও ওজন কমায়।
  • ত্বকের কোথাও কেটে বা ছিঁড়ে গেলে এই পাতাকে থেঁতলে ব্যথার স্থানে লাগালে ব্যথা ভালো হয়।
  • গর্ভবতী মায়েরা কাঁচা লেটুসপাতা খেলে মা ও শিশু উভয়ের শরীরেই রক্তের মাত্রা বাড়ে।
  • লেটুসপাতা নিয়মিত খেলে পেট ভার হয়ে থাকা, গ্যাস হওয়া, ক্ষুধা না লাগা, অ্যাসিডিটি—এই সমস্যাগুলো দূর হয়।

টবের মাটি: গাছের বৃদ্ধি এবং সবজি জাতীয় ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।

সময়: ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগাতে হবে।

বীজ বা চারা: গামলা টবে বীজ বুনলে ৩-৪ দিনে চারা গজায়। চারার ৪/৫টি পাতা গজালে টবে লাগাতে হয়। লেটুসের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না।

চারা রোপণ: পড়ন্ত বিকেলে চারা লাগাতে হয়। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটি খুবই হালকাভাবে চেপে দিতে হয় যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিঁড়ে না যায়। চারা লাগানোর পর ৩-৪ দিন ঢাকনি দিয়ে চারাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে। বিভিন্ন নার্সারি থেকে ১০ টাকার পলিব্যাগে একটি চারা অথবা ৩০০ টাকায় এক হাজার বীজ কিনতে পারবেন।

রোগবালাই: গোড়া পচা, আগা পোড়া অর্থাৎ পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যাওয়া দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। জাব পোকা লেটুসের খুব ক্ষতি করে। অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। কীটনাশক ছিঁটানোর ৭ দিনের মধ্যে লেটুস খাওয়া যাবে না। লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ দেখা দিলে গাছের পাতা নুইয়ে পড়ে এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

পরিচর্যা: টবে চারা লাগানোর পরপরই অনেক সময় দেখা যায় চড়াই শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে দু’চারটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতোভাবে টবেটি ঢেকে রাখতে হবে। তাছাড়া শুকনো পাতা বা রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে।

ফসল সংগ্রহ: চারা লাগনোর এক মাসের মধ্যেই লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়।

টবে সবজি চাষের সুবিধা: টবে সবজি চাষের বিশেষ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। যেমন- প্রাকৃতিক দুযোর্গ, প্রচণ্ড গরম, অতিরিক্ত বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা ইত্যাদির কবল থেকে টবের সবজিকে রক্ষা করা যায় স্থানান্তর করে। জাল দিয়ে ঘিরে রেখে পশু-পাখির উপদ্রব থেকে বাঁচানো যায়। সংসারের অব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পাত্র ও সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে আনা যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি অপব্যয় হয় না। নিজেরা তৈরি করে জৈব সার সবজিতে ব্যবহার করা যায় । ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এগুলো ঘরের বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখা যায়।  

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত