About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

চা চাষের সঠিক পদ্ধতি। চায়ের অন্যান্য পরিচর্যা ও সম্ভাবনা

Please don't forget to share this article

চা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানি পণ্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশে চা চাষ শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে। তারপর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মালনীছড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চা বাগান উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট এলাকা ও অপরটি হালদা ভ্যালিস্থ চট্টগ্রাম এলাকা চা উৎপাদন কেন্দ্র। সম্প্রতি করতোয়া ভ্যালিস উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় এবং নীলফামারী জেলাতে চা চাষ শুরু হয়েছে। দেশে ১৬৯ টি চা বাগানের ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর ৫৮ হাজার মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে।

চায়ের অনুকূল পরিবেশ : চা গাছ তার বৃদ্ধিতে কিছুটা আরণ্যক পরিবেশ পছন্দ করে। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ যেখানে তাপমাত্র ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত ২০০০ মিলিমিটারের উপরে ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি অর্থাৎ আর্দ্রতা ৭০-৯০% সেই এলাকা চায় চাষের আদর্শ পরিবেশ। এছাড়া দিনের আলোর স্থায়িত্ব ১২ ঘণ্টার কাছাকাছি ও মাটি অম্লধর্মী (পিএইচ ৪.৫-৫.৮), বেলে দোআঁশ ও সন্তোষজনক পুষ্টিমানসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। চা গাছ মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। চা বীজ গুটিবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে বীজতলায় ২০ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার ত্রিভুজ দূরত্ব পদ্ধতিতে লাগাতে হবে। বীজ বা কাটিং লাগানোর আগেই নার্সারির মাটি নেমাটোডমুক্ত রাখতে হবে। বীজতলায় ছায়া প্রদান আবশ্যক। প্রতি বেডে ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে ছন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নার্সারির চারার বৃদ্ধি ও সজীবতার জন্য রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি) ২:১:২ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কাটিং নার্সারিতে ১৫০ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার উঁচুতে ছন বা বাঁশের চাপ্টা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নার্সারিতে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।

অনুমোদিত বীজ জাত ও ক্লোন : সাধারণ বীজের চেয়ে উন্নত মান ও ফলনের জন্য এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত ৪ ধরনের বাইক্লোনাল বীজস্টক যথা : বিটিএস১, বিটিএস২, বিটিএস৩ এবং বিটিএস৪ নামক বীজস্টক চা শিল্পে ছাড়া হচ্ছে। চায়ের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিটিআরআই বীজজাত উন্নয়নের পাশাপাশি ক্লোনাল সিলেকশন বা ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত নিজস্ব ১৭টি ক্লোনজাত অবমুক্ত করেছে। বিটি১, বিটি২, বিটি৩, বিটি৫, বিটি৭, বিটি৯, বিটি১১, বিটি১৩ ও বিটি১৪ ক্লোনগুলো আদর্শ ক্লোন হিসাবে পরিগণিত। বিটি১০ ও বিটি১২ ক্লোনদ্বয় উচ্চফলনশীল ক্লোন শ্রেণিভুক্ত। বিটি৪, বিটি৬ ও বিটি১৫ উচ্চ পেয়ালীমানসম্পন্ন ক্লোন হিসেবে পরিচিত।

চাষ পদ্ধতি : বাংলাদেশে চায়ের আবাদযোগ্য শতকরা ৫৫ থেকে ৬০ ভাগই টিলা। টিলা বা পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে চায়ের চাষ করা হয়। উঁচু সমতল ভূমিতে চাষ ও মই দিয়ে এবং আগাছা পরিষ্কার করে জমি তৈরি করতে হয়। এপ্রিল-মে মাসে প্রাক-বর্ষাকালীন চা চারা রোপণ উত্তম। তবে যদি সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় তাহলে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসেও চারা রোপণ করা যায়। একক সারি পদ্ধতিতে টিলাতে রোপণ দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ৯০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ১৮ হাজার ৫১৮টি গাছ এবং সমতল ভূমিতে দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ১৫ হাজার ৫৭৬টি গাছ। দ্বৈতসারি পদ্ধতিতে রোপণ দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ১৯ হাজার ৯৬০টি গাছ। ক্লোন চারার জন্য ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার ও বীজ চারার জন্য ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার গভীরতা বিশিষ্ট এবং উভয়টির জন্য ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ততা বিশিষ্ট গর্ত করে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুস্থ সবল চারা রোপণ করতে হবে। গর্তের প্রথম ২৩ সে.মি. মাটি গর্তের একপাশে তুলে রেখে এ মাটির সঙ্গে প্রতিটি গর্তের জন্য ২ কেজি পচা গোবর সার, ৩০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫ গ্রাম এমপি সঙ্গে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত এ মাটি গর্তের নিচে দিতে হবে। মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে রোপণের পর চারার গোড়া থেকে ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার দূরে এবং ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার উঁচু করে মাল্চ বিছিয়ে দিতে হবে। মাল্চ হিসেবে কচুরিপানা, গুয়াতেমালা বা সাইট্রোনেলা ঘাস, এমনকি ঝোপ-জঙ্গলও ব্যবহার করা যেতে পারে। চা চারা বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এনপিকে মিশ্রসার প্রতি গাছে প্রয়োগ করতে হবে।

বংশবিস্তারঃ যদিও লেয়ারিং পদ্ধতিতে চা বাগানে বংশবিস্তার করা যায়। তবে সাধারণত বীজ দিয়ে চা এর বংশবিস্তার করা হয়। গাছ হতে সংগৃহীত অল্পদিনের ও বড় আকারের বীজ ব্যবহার করতে হয়। কেননা অনেক দিনের গুদামজাত করা চা বীজ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ভাল মানের ও অধিক ফলন পাওয়ার জন্য অঙ্গজ বংশবিস্তার (জোড়কলম, চোখকলম, দাবাকলম প্রভৃতি) করাই লাভজনক।

রোপণের পদ্ধতিঃ জাতভেদে নির্দিষ্ট দূরত্বে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে বাগানে চারা রোপণ করা যায়ঃ

(১) ত্রিভুজাকার পদ্ধতি
(২) বর্গক্ষেত্রাকার পদ্ধতি
(৩) আয়তক্ষেত্রাকার পদ্ধতি বা এক লাইন পদ্ধতি
(৪) জোর লাইন পদ্ধতি
(৫) তিন লাইন পদ্ধতি

চায়ের ছায়াবৃক্ষঃ প্রখর সূর্যতাপ এবং ঝড় বৃষ্টির ঝাপটা হতে চা গাছকে রক্ষা করার জন্যে বাগানের ভেতরে কিছু স্থায়ী গাছ লাগাতে হয়। এ সমস্ত গাছগুলো ছায়াবৃক্ষ নামে পরিচিত। বৃক্ষগুলো শিম্বী পরিবারযুক্ত হলে এরা মাটিতে জৈব পদার্থ ও সরবরাহ করতে পারে। এ দেশের বাগানে সচরাচর দৃষ্ট বৃক্ষগুলো হচ্ছেঃ-
(ক) কড়ই
(খ) চাম কড়ই
(গ) কালা শিরীষ
(ঘ) লোহা শিরীষ ইত্যাদি
১-১.৫ বছর বয়সের চারা চা বাগানে ছায়া বৃক্ষ হিসেবে ১৩ x ১৩ মিটার দূরত্বে লাগানো হয়। বাংলাদেশের চা-বাগানে স্বল্প স্থায়ী ছায়া বৃক্ষও লাগানো হয়ে থাকে। যেমন- বগামেডুলা ও অড়হর জাতীয় গাছ প্রথম পর্যায়ে চারা চা-গাছে ছায়া দান করে।

সার প্রয়োগঃ চা গাছ চির সবুজ এবং পাতাই ফসল হিসাবে গন্য হয় বলে এ ফসলের জন্যে সার অতীব প্রয়োজনীয়। তবে ফসফরাস ও পটাশ সার ব্যবহার করা হয়। অল্পবয়সী চা গাছের জন্যে হেক্টর প্রতি ১৮ থেকে ৩৬ কেজি নাইট্রোজেন ব্যবহার করতে হয়। যেহেতু চা গাছ অম্লীয় মাটিতে ভাল জন্মে তাই ইউরিয়ার পরিবর্তে অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়। টি.এস.পি ও এম.পি সার যথাক্রমে ফসফরাস ও পটাশ সরবরাহ করে। গাছ ছাটাই করার পরে কুঁড়ি ধরাকালীন সময়ে ২২৫-৩০০ কেজি অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রয়োগ করা হয়।

পরিচর্যাঃ ছাঁটাইকরণ একটা গুরুত্বপূর্ন কাজ যা দ্বারা গাছকে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় রাখা হয়, যা গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাতা আহরণের জন্যে চা গাছকে একটা প্রয়োজনীয় উচ্চতা ও নতুন পাতা গজানোর জন্যে রোপণের সাড়ে ৩ বছর পর থেকে ছাঁটাই কাজ শুরু হয়। এর ফলে নতুন শাখাও বের হয়। প্রতি বছরই হালকা ছাঁটাই করা হয়। প্রথম ছাঁটাইকরণে গাছকে ৩০ সেঃমিঃ উপরে কাটা হয়। ৫/৬ বছর ধরে প্রতি ঋতুর শেষে ১০ সেঃমিঃ করে ছাঁটাই করা হয়। এভাবে ছাঁটাই করতে করতে চা গাছের উচ্চতা ১.২ মিটার হলে একজন শ্রমিক দাঁড়িয়ে পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। তখন চা গাছকে বেশ নিচু থেকে ছাটাই করে পাতা তোলা উচ্চতায় নামানো হয়। ২৫/৩০ বছর পরে সমস্ত গাছকে মাটি থেকে তুলে পুনরায় চারা লাগানো হয়।

চায়ের পোকামাকড় : চা উৎপাদনে যেসব অন্তরায় রয়েছে তাদের মধ্যে চায়ের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও কৃমিপোকা অন্যতম। বাংলাদেশে চায়ে এ পর্যন্ত ২৫ প্রজাতির পতঙ্গ, ৪ প্রজাতির মাকড় ও ১০ প্রজাতির কৃমিপোকা শনাক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে আবাদি এলাকায় চায়ের মশা, উঁইপোকা ও লালমাকড় এবং নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদিতে এফিড, জেসিড, থ্রিপস, ফ্লাসওয়ার্ম ও কৃমিপোকা মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে পরিচিত। অনিষ্টকারী এসব পোকামাকড় বছরে গড়ে প্রায় ১৫% ক্ষতি করে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০% ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নিম্নে চায়ের এসব ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও তাদের দমন ব্যবস্থা আলোচনা করা হলো।

১. চায়ের মশা : চায়ের মশা একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। এটি টি-হেলোপেলটিস নামে পরিচিত। চায়ের এ শোষক পোকাটির নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ চায়ের কচি ডগা ও পাতার রস শোষণ করে এবং আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে যায়। ব্যাপক আক্রমণে নতুন পাতা গজানো বন্ধ হয়ে যায়। চায়ের এ কীট দমনে শুষ্ক মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ২.২৫ লিটার হারে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

২. লাল মাকড় : চায়ের লাল মাকড় খুবই অনিষ্টকারী। আকারে অতি ক্ষুদ্র। পরিণত পাতার উপর ও নিচ থেকে আক্রমণ করে থাকে। রস শোষণের ফলে পাতার উভয় দিক তাম্রবর্ণ ধারণ করে এবং শুষ্ক ও বিবর্ণ দেখায়। এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে হেক্টরপ্রতি ২.২৫ কেজি হারে সালফার ৮০ ডবি্লউপি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৬ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

৩. উইপোকা : উইপোকা মৌমাছির মতো সামাজিক পতঙ্গ। চা বাগানে ‘উলুপোকা’ নামে পরিচিত। এটা চায়ের অন্যতম মুখ্য ক্ষতিকারক কীট। চা গাছের মরা-পঁচা বা জীবন অংশ খায়। এরা মাটিতে ও গাছের গুঁড়িতে ঢিবি তৈরি করে বাস করে। কেবলমাত্র শ্রমিক শ্রেণিই চা গাছ খেয়ে থাকে। পোকাদমনে হেক্টর প্রতি ১.৫ লিটার হারে এডমায়ার ২০০ এসএল ১০০০ অথবা ১০ লিটার হারে ডার্সবান ২০ ইসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

৪. জেসিড : নার্সারি ও অপরিণত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। জেসিড দমনে হেক্টরপ্রতি ১.৫ লিটার হারে থাযোডান ৩৫ইসি অথবা ৫০০ মিলিলিটার হারে রিপকর্ড ১০ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।

৫. এফিড : এদের জাবপোকাও বলা হয়। নার্সারি ও অপরিণত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। হেক্টরপ্রতি ১.৫ লি. হারে থাযোডান ৩৫ ইসি অথবা ৫০০ মি.লি. হারে রিপকর্ড ১০ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

৬. থ্রিপস : থ্রিপস অতি ক্ষুদ্র বাদামি রংয়ের পোকা। নার্সারি ও অপরিণত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। এই পোকা দমনে হেক্টরপ্রতি ১.৫ লিটার হারে থাযোডান ৩৫ ইসি অথবা ৫০০ মি.লি. হারে রিপকর্ড ১০ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর ২ বার স্প্র্রে করতে হবে।

৭. উরচুঙ্গা : নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদিতে উরচুঙ্গা বড় সমস্যা। মুখে শক্ত ও ধারাল দাঁত আছে। সামনের পা জোড়া খাঁজকাটা, চ্যাপ্টা কোদালের মতো। পায়ের এ অবস্থার কারণে ছোট চা-চারাকে ধরে সহজেই কেটে ফেলে। এরা নিশাচর পতঙ্গ। মাটিতে গর্ত করে থাকে এবং সন্ধ্যার পর বের হয়ে আসে। এটা দমনে নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদি এলাকার উরচুঙ্গার গর্তগুলো শনাক্ত করে গর্তের মুখে দুই চা চামচ পোড়া মবিল দিয়ে চিকন নলে পানি ঢেলে দিতে হবে। উরচুঙ্গা গর্ত থেকে বের হয়ে এলে লাঠি বা পায়ের আঘাতে মেরে ফেলতে হবে।

৮. কৃমিপোকা : এরা মাটিতে বাস করে। অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক পোকা। দেখতে সুতা বা সেমাই আকৃতির। কচি শিকড়ের রস শোষণ করে। ফলে গিট তৈরি হয়। আক্রমণে চারা দুর্বল ও রুগ্ন হয় এবং চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ পোকা দমনে প্রতি ১ ঘনমিটার মাটিতে ফুরাডান ৫জি ১৬৫ গ্রাম হারে প্রয়োগ করলে ভালো।

অদ্যাবধি চায়ে ২২টি বিভিন্ন জীবাণুঘটিত রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। নিম্নে চায়ের প্রধান প্রধান রোগ ও তাদের দমন ব্যবসা আলোচনা করা হলো।

ক. নরম ডগা ও কচি পাতায় আক্রান্ত অংশ ফুলে গিয়ে ফোস্কার আকার ধারণ করে। এ রোগ দমনে চ্যাম্পিয়ন ৭৭ ডবি্লউপি ২.২৪ কেজি হারে বা ক্যালিঙিন ৮০ ইসি ১.১২ লিটার হারে হেক্টরপ্রতি ১১২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে।

খ. নার্সারি ও আবাদি এলাকায় নরম ডগা ও কচি পাতায় আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে ধীরে ধীরে উপর থেকে নিচের দিকে মরতে থাকে। এ রোগ দমনে চ্যাম্পিয়ন ৭৭ ডবি্লউপি ২.২৪ কেজি হারে বা কিউপ্রাভিট ৫০ ডবি্লউপি ২.৮ কেজি হারে বা ক্যালিঙিন ৮০ ইসি ১.১২ লিটার হারে হেক্টর প্রতি ১১২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে।

গ. এক প্রজাতির শৈবালের আক্রমণে কাণ্ড ও বয়স্ক ডালে এ রোগের সৃষ্টি হয়। কাণ্ড আক্রান্ত হলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় পাতায়। পাতাগুলো হলুদবর্ণ ধারণ করে। এ রোগ দমনে ম্যাকুপ্রং ১৬ ডবি্লউ ২.২৪ কেজি হারে হেক্টর প্রতি ১১২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে।

কুঁড়ি ও পাতা আহরণঃ এটি এমন এক ধরনের কাজ যেখানে কয়েকদিন পর পর চা গাছের কচি পাতা ও কুঁড়ি গাছের উপরের অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয়। রোপণের ৩ বছর পর থেকে পাতা আহরণ করা যায়। দুটি কচি পাতা ও একটি কুঁড়ি সাধারণত সংগ্রহ করা হয়। ছাঁটাইকরণ সময়ের প্লানিং নির্ভর করে  সাধারণত বছরে ১৫/১৬ বার পাতা ও কুঁড়ি সংগ্রহ করা যায়।
৬০% চা, জুলাই, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বও মাসে আহরন করা যায়।
২০% চা, জুন ও নভেম্বর মাসে আহরন করা হয়।
২০% চা, জুন, নভেম্বর মাস ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে আহরন করা হয়।

ফলনঃ চায়ের ফলন ১৭০০-৩৫০০ কেজি/হেক্টর হয়ে থাকে।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত