About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

আলুর মড়ক বা নাবি ধ্বসা (Late Blight of Potato) রোগ ও দমন ব্যবস্থাপনা

Please don't forget to share this article

আলুর মড়ক (Late Blight) রোগ বাংলাদেশের আলু উৎপাদনের প্রধান অন্তরায়। ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স (Phytophthora infestans) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণ:  

এ রোগের আক্রমণে প্রথমে পাতায় ছোপ ছোপ ভেজা হালকা সবুজ গোলাকার বা এলোমেলো দাগ দেখা দেয়, যা দ্রুত কালো হয়ে পচে যায়। গাছের কাণ্ড এবং টিউবারেও এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। সকাল বেলা মাঠে গেলে পাতার নিচে সাদা সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক দেখা যায়। তীব্র আক্রমণে সম্পূর্ণ জমির ফসল পুড়ে যায়। নিম্ন তাপমাত্রা এবং কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ায় আক্রান্ত গাছ দ্রুত লতাপাতা ও কাণ্ডসহ পচে যায়। পরবর্তীতে ২-৩ দিনের মধ্যেই মাঠের সমস্ত গাছই মরে যেতে পারে। আক্রান্ত  টিউবারের গায়ে ও ভিতরের অংশে গাঢ় বাদামি থেকে কালচে দাগ পড়ে।

অনুকূল আবহাওয়া ও রোগের উৎস:

ঠাণ্ডা ও ভেজা আবহাওয়া এ রোগ বিস্তারের জন্য অনুকূল। যদি রাতে নিম্ন তাপমাত্রা ও উচ্চ জলীয় বাষ্প এবং তার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, কুয়াশা এবং পাতায় শিশির জমে থাকে তাহলে এ রোগ কয়েক দিনের মধ্যে মহামারী রূপ ধারণ করে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝী থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের যেকোন সময় এ রোগ আলু গাছে দেখা দিতে পারে।

এ রোগের প্রধান উৎস হলো আক্রান্ত বীজ। সাধারণত এক হেক্টর জমিতে একটি রোগা আক্রান্ত বীজ আলু থাকলেই সেটা অনুকূল পরিবেশে ঐ পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট করে ফেলতে পারে। বাতাস, বৃষ্টিপাত, সেচের পানি ইত্যাদির সাহায্যে এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত গাছ থেকে সুস্থ গাছে বিস্তার লাভ করে। বিকল্প পোষক যেমন টমেটো গাছ থেকেও এ রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। হিমাগারে রাখা আলুতে এই রোগের জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং গাছ গজানোর ৪৫-৫০ দিন পর অনুকূল পরিবেশে এই রোগের সূচনা হতে পারে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা:

রোগ আক্রমণের পূর্বেঃ

  • রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত যেমন- বারি আলু- ৪৬, বারি আলু- ৫৩, বারি আলু- ৭৭ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • সারিতে ভালোভাবে মাটি উঁচু করে দিতে হবে।
  • আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে এবং আগাম সংগ্রহ করতে হবে ।
  • নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরাধের জন্য ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ম্যানকোজেব গোত্রের ছত্রাকনাশক যেমন- ডাইথেন এম-৪৫/ইন্ডোফিল এম-৪৫/ পেনকোজেব/ফরমোকোজেব ৮০ ডব্লিওপি/মাইকোজেব ৮০ ডব্লিওপি ইত্যাদি ২ গ্রাম/লিটার পানিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

রোগাক্রান্ত হওয়ার পরঃ

  • আক্রান্ত জমিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া অব্দি সেচ প্রাদান বন্ধ রাখতে হবে।
  • পার্শ্ববর্তী বা নিজের জমিতে রোগ দেখা দেওয়া মাত্রই ৭ দিন পর পর নিম্নের যে কোন একটি ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি (২ গ্রাম/লিটার) অথবা এক্রোভেট এম জেড (২ গ্রাম/লিটার) অথবা এগ্রোমেট প্লাস ৬৯ ডব্লিওপি (৪ গ্রাম/লিটার) বা ফুলিমেইল ৬০ ডব্লিওপি (২ গ্রাম/লিটার) বা জ্যামপ্রো ডি এম ( ২ মিলি/লিটার ) বা কার্জেট এম ৮ ( ২ গ্রাম/লিটার ) পানিতে দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
  • যদি কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া অনেক দিন থাকে এবং রোগের আক্রমণ বেশি হয় তাহলে নিম্নোক্ত ছত্রাকনাশকের মিশ্রণ জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। মেলোডি ডুও ৬৬.৮ ডব্লিওপি  ৪ গ্রাম + সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ১ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে) অথবা এক্রোভেট এম জেড ৪ গ্রাম + সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ১ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে) অথবা এক্রোভেট এম জেড ৪ গ্রাম + মেলোডি ডুও ৬৬.৮ ডব্লিওপি ১ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে) অথবা ফুলিমেইল ৬০ ডব্লিওপি ৪ গ্রাম + অটোস্টিন ৫০ ডব্লিউডিজি ১ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে)।

এখানে উল্লেখ্য যে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে আরো ঘন ঘন অর্থাৎ৩-৪ দিন পর পর ঔষধ ছত্রাকনাশকের মিশ্রণ স্প্রে করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভেজা অবস্থায় জমিতে ছত্রাকনাশক না দেওয়াই ভালো। আর যদি দিতেই হয় তাহলে প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম সাবানের গুড়া পাউডার যোগ করে নিতে হবে। ছত্রাকনাশক পাতার নিচে ও উপরে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ  স্প্রেয়ারের পরির্বতে পাওয়ার স্প্রেয়ার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

সাবধানতাঃ

  • মাটি ভেজা অবস্থায় কিংবা বৃষ্টির পর পর আলু না তুলে শুকনা অবস্থায় মাটিতে ‘জো’ এলে আলু তুলতে হবে।
  • হিমাগারে আলু রাখার আগে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বীজ বাছাই করতে হবে, যাতে কোনভাবে রোগাক্রান্ত আলু সুস্থ বীজের সাথে না থাকে।
  • রোগাক্রান্ত গাছ দিয়ে আলুর স্তুপ বা সংগৃহীত আলু ঢেঁকে রাখা যাবে না।
  • আলুর মৌসুমে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শণ করতে হবে।
  • মেটালেক্সিল গোত্রের ছত্রাকনাশকের বিরুদ্ধে ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স এর নতুন রেস তৈরি হওয়ায় এখন থেকে ঐ গোত্রের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
  • আক্রান্ত জমি হতে বীজ আলু সংগ্রহ করা যাবে না।

বি.দ্র.: কীটনাশক ব্যবহারের পূর্বে স্প্রেকারীকে অবশ্যই এপ্রোন, হাত মোজা, সানগ্লাস ও মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়াও বাতাসের অনুকূলে সবসময় স্প্রে করতে হবে।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত