About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

বিনা ধান ১৮ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষাবাদ পদ্ধতি ( বোরো ধানের নতুন জাত )

Please don't forget to share this article

বিনা ধান ১৮ বোরো মৌসুমের চাষাবাদের উপযোগী উচ্চফলনশীল নতুন একটি জাত যা পরমাণু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। বোরো ধানের এই জাতটি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ( বিনা ) কতৃক উদ্ভাবিত হয়েছে।

বিনা ধান ১৮ এর বৈশিষ্ট্যঃ

  • এই জাতটি ব্রি ধান ২৯ এর চেয়ে ১৩-১৫ দিন আগে পাকে অথচ ব্রি ধান ২৯ এর সমান ফলন দেয়।
  • বিনা ধান ১৮ এর গাছ শক্ত বলে হেলে পড়ে না। এই জাতের গাছের ডিগ পাতা খাঁড়া হয়ে থাকে।
  • এছাড়া গাছের পাতা গাঢ় সবুজ, লম্বা ও চওড়া হয়ে থাকে।
  • জীবনকাল বোরো মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন।
  • সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে বোরো মৌসুমে ফলন হয় হেক্টর প্রতি গড়ে ৭.২৫ এবং সর্বোচ্চ ১০.৫ টন।
  • চালে হাল্কা সুগন্ধি বিদ্যমান। চাল লম্বা ও মাঝারী মোটা হয়ে থাকে।
  • রান্নার পর ভাত ঝরঝরে হয় এবং দীর্ঘক্ষণ রাখলে নষ্ট হয় না।
  • এই জাতটি পাতা পোড়া, খোল পচা ও কাণ্ড পচা রোগ তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিরোধ করতে পারে।
  • এছাড়া এ জাতটির প্রায় সব ধরনের পোকার আক্রমণ বিশেষ করে বাদামি গাছ ফড়িং, গলমাছি ও পামরি পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।
  • বিনা ধান ১৮ বোরো মৌসুমের জন্য অনুমোদিত হলেও জাতটি আউশ মৌসুমে চাষ করা যায়।

যেসব এলাকার জন্য উপযোগীঃ লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের প্রায় সব মধ্যম উঁচু ও মধ্যম নিচু জমিতে বিশেষ করে বৃহত্তম রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, টাঙ্গাইল, যশোর, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিনা ধান ১৮ চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ বিনা ধান ১৮ জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী বোরো জাতের মতোই। জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হলো-

বীজের হারঃ প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি বা একরপ্রতি ১০-১২ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।

বীজ বাছাই ও শোধন পদ্ধতিঃ ভারি, পুষ্ট ও  রোগবালাই মুক্ত বীজ বাছাই করতে হবে। কার্বাণ্ডাজিম দলীয় ছত্রাকনাশক ( ভিটাভ্যাক্স-২০০ বা অটোস্টিন বা নোইন ) প্রতি ১০ কেজি বীজে ২৫ গ্রাম হারে ব্যবহার করে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধনের জন্য মাত্রানুযায়ী ছত্রাকনাশক মিশিয়ে একটি বদ্ধ পাত্রে ৪৮ ঘন্টা রাখা আবশ্যক।

বীজতলা বীজ বপনের সময়: বোরো মৌসুমে অঞ্চল ভেদে ২০ কার্তিক থেকে ৫ অগ্রহায়ণ অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি থাকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ০৫ শতাংশ (২০০ বর্গমিটার) পরিমাণ বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলা যাবে।

চারার বয়সঃ বোরো মৌসুমে ৩০-৪০ দিন বয়সের চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। তবে ৪৫-৫০ দিনের চারা রোপণ করলেও তেমন ক্ষতি হবে না। বেশি বয়সের চারা লাগালে ফলন কমে যায়, তাই বোরো মৌসুমের জন্য ৬ সপ্তাহের বেশি বয়সের চারা রোপণ করা কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়।

চারা রোপণ পদ্ধতিঃ বীজতলায় চারা করার পর মূল জমিতে লাইন করে চারা রোপণ করলে ফলন বেশি হয়। চারা রোপণের সময় জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। প্রতি গুছিতে ১ টি করে সতেজ চারা রোপণ করাই যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে ২-৩ টি সুস্থ-সবল চারা একত্রে এক গুছিতে রোপণ করা যেতে পারে। চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে কোনো চারা মারা গেলে সেখানে নতুন চারা রোপণ করতে হবে।

চারার রোপণ দূরত্বঃ চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিটার এবং সারিতে গুছি থাকে গুছির দূরত্ব ১৫-২০ সেন্টিমিটার থাকা ভালো।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

সারের নাম বীজতলার জন্য রোপা ক্ষেতের জন্য
প্রতি হেক্টরে প্রতি একরে প্রতি শতাংশে প্রতি হেক্টরে প্রতি একরে প্রতি বিঘায়
ইউরিয়া (কেজি) ১০০-১২০ ৪০-৫০ ০.৪-০.৫ ২২০-২৫০ ৯০-১০০ ৩০-৩৫
টিএসপি(কেজি) ৮০-১০০ ৩২-৪০ ০.৩-০.৪ ১১০-১২০ ৪৫-৫০ ১৪-১৭
এমওপি (কেজি) ৩০-৫০ ১২-২০ ০.১-০.২ ১৪০-১৭০ ৫৫-৬৫ ১৮-২৩
জিপসাম ৬৫-৮০ ২৫-৩০ ৮-১০
দস্তা ৮-১০ ৪.০-৪.৫ ১.৫

চারা রোপণের জন্য জমি তৈরির শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, জিপসাম এবং দস্তা জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে চাষের মাধ্যমে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ চারা রোপণের ৭-৮ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক ৩০-৩৫ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে অথবা এক তৃতীয়াংশ চারা রোপণের ৭-৮ দিন পর, এক তৃতীয়াংশ চারা রোপণের ১৮-২০ দিন পর এবং শেষ তৃতীয়াংশ চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর জমির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে। অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি বোরাক্স ২-৩ কেজি (একর প্রতি ১ কেজি) এবং দস্তা সার ৪-৫ কেজি (একর প্রতি ২ কেজি) হারে দিতে হবে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের ২-১ দিন আগে জমির অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে আগাছা দমন করতে হবে। জমির উর্বরতা ও ফসলের অবস্থায় ওপর নির্ভর করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ মাত্রার তারতম্য করা যেতে পারে।

পরিচর্যা : এই জাতের ধানের পরিচর্যা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই। চারা রোপণের পর আগাছা দেখা দিলে দ্রুত নিড়ানি যন্ত্র বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার ও মাটি নরম করতে হবে। চারা রোপণের পর থেকে জমিতে ৫-৭ সেন্টিমিটার (২-৩ ইঞ্চি) পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ধান গাছে যখন কাইচথোড় আসা শুরু করবে তখন পানির পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হবে। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে সেচ দেওয়া বন্ধ করে জমির পানি শুকিয়ে ফেলতে হবে।

রোগ ও পোকা মাকড় দমনঃ রোগ বালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলে নিকটস্থ কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে প্রচলিত তরল বা দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া খোল ঝলসানো, ব্যাক্টেরিয়াল লিফ ব্লাইট বা পাতা ঝলসানো ও অন্যান্য রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত রোগনাশক প্রয়োগ করতে হবে। খোল ঝলসানো, কাণ্ড পচা রোগ দেখা দিলে বেনলেট, হোমাই, অটোস্টিন বা টপসিন মিথাইল মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োাগ করা যেতে পারে।

ফসল কাটা, মাড়াই ও সংরক্ষণ : শীষে ধান পেকে গেলেই ফসল কাটতে হবে। অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শীষ ভেঙে যায়। শীষের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত ও স্বচ্ছ হলে ধান ঠিকমতো পেকেছে বলে ধরা হয়। মাড়াই করার পর ধান অন্তত ৪-৫ দিন রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর ঝেড়ে গোলায় সংরক্ষণ করতে হবে।

ফলনঃ উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিচর্যা পেলে বোরো মৌসুমে বিনা ধান-১৮ এর ফলন হেক্টর প্রতি গড়ে ৭.২৫ টন ও সর্বোচ্চ ১০.৫ টন হয়।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত