About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

ভুট্টার বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকামাকড় এবং দমন ব্যবস্থাপনা

Please don't forget to share this article

ভুট্টা হলো উচ্চ ফলনশীল সুপরিচিত দানাদার শস্য। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টাতে পুষ্টিমান বেশি থাকে। ভুট্টাতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম হলুদ রঙের ভুট্টার দানায় প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন “এ” রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতে ভুট্টার চাষ হয়ে থাকে। ভুট্টা চাষ করে অনেক ভুট্টা চাষি লাভবান হলেও অনেকে আবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন ভুট্টার জমিতে নানা ধরণের রোগ-বালাইয়ের কারণে। নিম্নে ভুট্টার রোগ ও পোকামাকড় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

ভুট্টার রোগ ও প্রতিকারঃ 

ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগঃ

  • রোগাক্রান্ত গাছের নীচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ পরিলিক্ষিত হয়।
  • পরে তা ভুট্টা গাছের উপরের অংশে বিস্তার লাভ করে।
  • রোগের আক্রমণ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে গিয়ে মরে যায়।

প্রতিকারঃ

  • রোগ প্রতিরোধী ভুট্টার জাত লাগাতে হবে।
  • রোগের আক্রমণ বেশি হলে টিল্ট ২৫০ ইসি ১ এমএল / লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
  • ভুট্টা তোলার পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ভুট্টার কান্ড পচা রোগঃ

  • এই রোগের আক্রমণে গাছের কাণ্ড পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে।
  • ভুট্টার এ রোগ সাধারণত খরিপ মৌসুমে বেশি হয়ে থাকে। তবে জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি হলে এবং পটাশের পরিমাণ কম হলেও এই রোগ হয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ

  • ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • প্রোভেক্স/ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে স্কোর ২৫০ ইসি, ০.৫ এম এল/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

মোচা ও দানা পচা রোগঃ

  • আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে পুরো মোচা পচে যায়।
  • দানা সম্পুর্ণ পুষ্ট না হয়ে কুচকে বা ফেটে যায়।
  • ভুট্টার মোচাতে দানার উপর বা মাঝে খালি চোখে ছত্রাক দেখা যায়।
  • ভূট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত যদি বৃষ্টিপাত বেশি হয় তাহলে এ রোগের আক্রমণও বেশি হবে।

প্রতিকারঃ

  • বার বার একই জমিতে ভুট্টা চাষ পরিহার করতে হবে।
  • ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে হবে।
  • ভূট্টা পেকে গালে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।

ভুট্টার পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনাঃ

ভুট্টার কাটুই পোকাঃ

  • এই পোকা রাতের বেলা বের হয়ে চারা গাছের গোড়া মাটি বরাবর কেটে দেয়।
  • এ পোকার তীব্র আক্রমণে ভুট্টার জমি প্রায় চারা শূন্য হয়ে পড়তে পারে। কেননা এ পোকা বেঁচে থাকার জন্য যে পরিমাণ খায় তার থেকে বেশি চারা গাছ কেটে ক্ষেত নষ্ট করে দেয়।
  • কীড়া অবস্থায় কিন্তু এ পোকা দিনের বেলা মাটির ফাটলে বা গর্তে লুকিয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ

  • কেটে দেওয়া চারার আশেপাশের মাটি খুড়ে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
  • কেরোসিন মিশ্রিত পানি (২-৩ লি./ হেক্টর ) দিয়ে জমি সেচ দিতে হবে।
  • পাখি বসার জন্য ভুট্টার জমিতে ডালপালা পুতে দিতে হবে।
  • রাতের বেলা জমিতে মাঝে মাঝে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে সকালে তার নিচে কীড়া এসে জমা হলে সেগুলোকে মেরে ফেলতে হবে।
  • ক্লোরপাইরিফস দলের কীটনাশক যেমন: ডারসবান ৫ মিলি./লি হারে অথবা (ক্লোরপাইরিফস+ সাইপারমেথ্রিন) দলের কীটমাশক যেমন: বাইপোলার ৫০ ইসি বা হাইড্রো বা সেতারা ৫৫ ইসি ২ মি.লি. / লি. হারে অথবা ল্যাম্ডা সাইহ্যালোথ্রিন দলের কীটমাশক যেমন: ক্যারাটে বা ফাইটার বা রিভা ২.৫ ইসি ১.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার পর গাছের গোড়ায় স্প্রে করা।

ভুট্টার কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা

  • এ পোকা গাছের গোড়ায় ছিদ্রকরে কাণ্ডের ভিতরে ঢুকে খেতে থাকে।
  • পরে গাছের মাইজ শুকিয়ে গাছ মরে যায়।
  • ফুল আসার পর আক্রমণ করলে ফুলসহ কাণ্ড শুকিয়ে গাছ মারা যায়।

প্রতিকারঃ

  • সারিতে গাছের গোড়ায় মাটি তোলার সময় পোকা বের হলে মেলে ফেলতে হবে।
  • কেরোসিন মিশ্রিত পানি সেচ দিতে হবে।
  • জমিতে পাখি বসার জন্য ডাল পুতে দিতে হবে।
  • কারটাপ জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ কারটাপ বা সানটাপ) ২.৪ গ্রাম/ লিটার পানিতে অথবা কার্বোসালফান জাতীয় কীটনাশক ( মারশাল ) ১.১৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ভুট্টার লেদা পোকাঃ

  • এই পোকা ভুট্টার পাতা কেটে কেটে খায়।
  • এই পোকা কীড়া ও পূর্ণবয়স্ক উভয়ই অবস্থাতেই পাতায় পাশ থেকে খেতে থাকে।

প্রতিকারঃ

  • আলোর ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মোথ ধরে মেরে ফেলে এদের সংখ্যা কমানো যায়।
  • পাখি বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক (এসির্কাব /ভিটাব্রিল) ৩০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

ভুট্টার মোচার কীড়াঃ

  • কীড়াগুলো ভুট্টার কচি মোচায় আক্রমণ করে এবং সিল্ক নষ্ট করে দেয়।
  • পরবর্তীতে আক্রান্ত মোচা পচে যায়।

প্রতিকারঃ

  • আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সবিক্রন ৪২৫ ইসি ২ এমএল / লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত