About Us Contact Us Privacy Policy Terms & Conditions Copyright

ভূট্টার ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা আইপিএম পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ

Please don't forget to share this article

ভূট্টার ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা সাম্প্রতিক কালে বেশ আলোচিত। এই পোকা ভূট্টাসহ প্রায় ৮০ টির অধিক ফসলের ক্ষতি করে। এটি সাধারণ কাটুই পোকা থেকে একটু ভিন্ন প্রজাতির পোকা। এদের মাথায় ইংরেজি Y অক্ষরের মতো দাগ থাকে এবং শেষে চারটি লুডুর গুটির মতো ডট (::) থাকে।

শীতকালে ৭০-৭৫ দিন বাঁচলেও গরমকালে ৩০-৩৫ দিন বাঁচে। কিন্তু গরমকাল অর্থাৎ খরিফ-১ মৌসূমে এর ক্ষতির ব্যাপকতা বেশি। এই পোকা নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট বালাইনাশক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই, প্রতিরোধ ব্যবস্থাই একমাত্র উপায়।

ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার জীবনচক্র ০৪ ধাপে সম্পন্ন হয় যথাঃ ডিম, কীড়া, পুত্তলী ও মথ ।

মূলত ক্ষতি করে কীড়া বা বাচ্চা অবস্থায়। কীড়া অবস্থার আবার ৪-৬ টি পর্যায় আছে, ১-৩ ধাপের তুলনায় ৪-৬ ধাপ অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রাথমিক অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ৪-৬ ধাপে চলে তা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে আইপিএম (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর বিকল্প নাই।

পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে ফসলের বালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমার মধ্যে রাখাই আইপিএম পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য। আইপিএম পদ্ধতিতে সাধারণত ০৫ টি ধাপে বালাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভূট্টা ফসলের ফল আআর্মিওয়ার্ম পোকা দমনে কিভাবে আইপিএম পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় তা বর্নিত হলো-

আইপিএম এর ০৫ টি ধাপঃ

০১) জৈবিক নিয়ন্ত্রণঃ উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণের মাধ্যমে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার ডিম,কীড়া,পুত্তলী এমনকি মথের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ক) পরজীবিতা ও পরভোজিতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণঃ বোলতা প্রজাতির ট্রাইকোগ্রামা, কোটেসিয়া, টেনিনোমাস ওয়াসপ (Wasp), Chelonus, ক্যারপস পোকার ডিম খায়, ব্রাকন হেবিটর পোকার কীড়া খেয়ে থাকে।

খ) খাদক পোকার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণঃ লেডিবার্ড বিটল, ইয়ার উইগ(Earwigs) পোকা ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার ডিম খায়। পিপড়া, গ্রাইন্ড বিটল (Ground beetle), এ্যাসাসিয়ান বাগ,ফ্লাউয়ার বাগ, মাকড়শা ফল আর্মিওয়ার্ম এর কীড়া খায়।

গ) ভাইরাস দ্বারা নিয়ন্ত্রণঃ SfNPV (Spodoptera frugiperda Nuclear Polyhedrosis Virus), SfMNPV (M= Multi caps) ও SNPV ভাইরাস দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ঘ) ছত্রাক দ্বারা নিয়ন্ত্রণঃ Beauveria bassiana, Metarhizium anisopliae, Metarhizium rileyi জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করেও আফ্রিকান দেশে ফল আর্মিওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

ঙ) ব্যক্টেরিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রণঃ Bt (Bacillus thuringensis) দিয়েও এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়াও কিছু নেমাটোড ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে ফল আর্মিওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

চ) সকাল বেলা ২-১ টি হাঁস ছেড়ে দিয়েও দেখা যেতে পারে।

০২) আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

ক) বীজ শোধনঃ ইপ্রিডিয়ন, কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে বপণ করা।

খ) ভূট্টা লাগানোর ৫-৭ দিনের মধ্যেই পার্চিং করে দেওয়া

গ) প্লাবন সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে ডিম, কীড়া, পুত্তলী ধ্বংস করা

ঘ) গভীরভাবে জমি চাষ করা, যাতে মাটির নিচে থাকা পুত্তলী ধ্বংস হয়

ঙ) জমির চারিদিকে সাথী ও আইল ফসল যেমন, নেপিয়ার ও Brachiaria ঘাস, ধনিয়া, ঝাল মরিচ, Desmodium গাছ লাগিয়ে আকর্ষক-বিকর্ষক (Push-Pull) পদ্ধতিতে ফল আর্মিওয়াম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

চ) পরিমিত মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করা। দেখা গেছে যে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে ফল আর্মিওয়ার্ম এ-র প্রকোপ বেশি দেখা গেছে।

০৩) বালাই সহনশীল জাতের ব্যবহারঃ যদিও সুনির্দিষ্ট কোন জাত এখনো বের হয়নি তবে আফ্রিকান দেশগুলোতে GMO Bt maize জাতে ফল আর্মিওয়ার্ম এর আক্রমণ প্রবণতা তুলনামূলক কম পরিলক্ষিত হয়েছে।

০৪) যান্ত্রিক দমন ব্যবস্থাপনাঃ

ক) হাত বাছাই এর মাধ্যমে ডিম, কীড়া সংগ্রহ করে ধ্বংস করা, এইজন্য পর্যবেক্ষণের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন জমিতে যেতেই হবে।

খ) ফল আর্মিওয়ার্ম এর মথ সনাক্তকরণে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ফাদে পড়া মথ হাত দিয়ে মেরে ফেলা।

গ) ছাই, বালি, কাঠেরগুড়া (Sawdust), Dirt এর পাতা ও কান্ডের সন্ধিস্থলে (Leaf whorl) এর ছিটিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঘ) মিষ্টি জাতীয় দ্রবণ,মাছের স্যুপ ব্যবহার করেও অনেক দেশে ফল আর্মিওয়ার্ম দমন করতে দেখা গেছে।

০৫) রাসায়নিক/বালাইনাশকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণঃ

ক) প্রথমেই ঘরে তৈরি বালাইনশাক যেমন নিম পাতার রস, নিম ও মেহগণির বীজ গুড়ো করে জ্বাল দিয়ে, তারপর ঠান্ডা করে ভূট্টা গাছে স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

খ) বাজারে অবশ্য এখন বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক যেমন স্পিনোসেড গ্রুপের সাকসেস, ট্রেসার, স্পিনোসেড ইত্যাদি পাওয়া যায় যা, ফল আর্মিওয়ার্মের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে।

গ) সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। ক্লোরোপাইরিফস, মিথাইল প্যারাথিয়ন, মিথোমিল, সিফ্লুথ্রিন, ইনডোসালফান, এমামেকটিন বেনজোয়েট গ্রুপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, কিছু গ্রুপ যেমন কার্বারিল, ডায়াজিনন ইত্যাদি ব্যবহার অনেক দেশে ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে অনুমোদিত নয়। এতে পোকার resistant power বৃদ্ধি পায়।

তথ্যসূত্রঃ FAO কর্তৃক প্রকাশিত Integrated management of the Fall Armyworm on Maize (A Guide For Farmer Field Schools in Africa)

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Please don't forget to share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.agriculturelearning.com কর্তৃক সংরক্ষিত